কক্সবাজারে বেড়াতে এসে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া দুই তরুণীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বিচ হলিডেতে অবস্থানকারী লাবণী আকতারের (১৯) মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ও হোটেল রয়েল টিউলিপে অবস্থান নেওয়া মাফুয়া খানমের (২৯) মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই ছৈয়দুল ইসলাম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা করেছেন।  

শুক্রবার (২০ মে) কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন ও উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

কক্সবাজার সদর থানায় ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকালে লাবণী আকতারের বাবা মামলাটি দায়ের করেন। যেখানে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকার মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে কামরুল আলম (২০) ও আবদুর রহমানের ছেলে আরিফ রহমান নিলু (২১) আটকের পর ৫৪ ধারায় কারা হেফাজতে রয়েছে। পলাতক রয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকার মোশারফ হোসেনের ছেলে তানজিল হাসান (২১) ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা মাহিম হাসান অনিক (২০)।

তিনি জানান, মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন- তার মেয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিল। অভিযুক্ত চারজন কৌশলে তাকে কক্সবাজার এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
 
ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, চারবন্ধুর সঙ্গে গত ১১ মে কক্সবাজার আসেন লাবণী। এসে কলাতলীর বিচ হলি ডে নামে একটি আবাসিক হোটেল অবস্থান নেন। সেখানে ১৪ মে অসুস্থ হলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৬ মে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় সঙ্গে আসা চারজনের মধ্যে দুইজন স্বীকার করেন তারা অতিরিক্ত মদপান করেছিলেন। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হলেও অপর দুইজন পালিয়ে যান। বুধবার (১৮ মে) দুপুরে লাবণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

অপরদিকে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন, মাফুয়া খানমের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক একজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গত বুধবার সকালে গোপালগঞ্জের মাফুয়া খানম নামে ওই মেয়েটি দিনাজপুরের নাছির উদ্দিনের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেল রয়েল টিউলিপে উঠেন। দুপুরে খাবার শেষে দুইজনই নিজেদের কক্ষে অবস্থান নেন। এর কিছুক্ষণ পর মেয়েটির শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কথা জানানো হলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তারা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। প্রেমের সম্পর্কের জেরে কক্সবাজার এনে মাফুয়া খানমকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় নাছির উদ্দিন পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন।

তবে কক্সবাজারের হোটেল সিগালে বুধবার রাতে মো. মনিরুল ইসলাম (৪০) নামে এক পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে উঠা লিজা রহমান ঊর্মিকে (৩৫) পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন।

তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুইজন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সিগাল হোটেলের ৭২৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অসুস্থতা বোধ করলে মনিরুলকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। রাত ১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় স্ত্রী- পরিচয়ে সঙ্গে থাকা নারীকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা স্বামী-স্ত্রী নয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক নারী স্বীকার করেছেন। মারা যাওয়া মনিরুলের স্বজনদের খবর পাঠানো হয়েছে। তারা আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তিন পর্যটকের মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। অপর পর্যটকের আত্মীয়রা আসলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সাইদুল ফরহাদ/আরএআর