জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধ দম্পতি আব্দুল হক ও রহিমা বেগম

চাটাইয়ের বেড়া। তাও আবার ভাঙাচোরা। ছাউনি খড়ের। সেটাও কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে। দিনে সূর্যের আলো আর রাতে আকাশের চাঁদ-তারা উঁকি দেয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে খড়ের ওপর দেওয়া হয়েছে পলিথিন। এমনই একটি জরাজীর্ণ ঘরে বাস করেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের দারখোর ধনুপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ দম্পতি আব্দুল হক (৬৮) ও রহিমা বেগম (৬৩)।

আব্দুল হক পেশায় একজন দিনমজুর। স্ত্রী রহিমা বেগম গৃহিণী। এক সময় রহিমা বেগম কাজ করতে পারলেও বয়সের ভারে আর অসুস্থতার কারণে এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। 

কথা বলে জানা গেছে, হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ও বয়সের ভারে তেমন কাজ করতে পারেন না আব্দুল হক। তার ভিটেমাটি থাকলেও নেই থাকার মতো ঘর। একদিন কাজে বের না হলে তার চুলায় হাঁড়ি উঠে না। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে খড় ও পলিথিন দিয়ে নির্মিত জরাজীর্ণ ভাঙা ঘরে বাস করেন। বৃষ্টির দিনে ঘরে ছাউনি দিয়ে পানি পড়লেও তাদের সেই ঘরেই থাকতে হয়। বৃদ্ধ দম্পতির তিন ছেলে থাকলেও তারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। তারাও পেশায় দিনমজুর। মাঝেমধ্যে মন চাইলে বাবা-মাকে দেখতে আসেন তারা। 

কথা হয় বৃদ্ধ আব্দুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। আগে কাজ করে চলতে পারলেও এখন বৃদ্ধ বয়সে তেমন কাজ করতে পারি না। তারপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করি। একদিন কাজ করলে দুইদিন বসে থাকি। ভাঙা ঘরে থাকি। ঘর মেরামত করব সেই টাকাও নেই। শুনেছি সরকার অনেক গরিব মানুষকে ঘর দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। আমি কী কিছুই পাব না। আমিও তো গরিব মানুষ। চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গেলে শুধু আশ্বাস দেন। 

ভাঙাচোরা ঘরের সামনে বৃদ্ধ আব্দুল হক

একই কথা বলেন বৃদ্ধ আব্দুল হকের স্ত্রী রহিমা বেগম। তিনি বলেন, বিয়ের পর নিজের বাবার ভিটেমাটিতে বসবাস শুরু করি। আমিও আগে মানুষের বাসায় কাজ করতাম। এখন অসুস্থ। আমার স্বামীও হাঁপানি রোগে ভুগছে। তিনি তেমন কাজ করতে পারেন না। তারপরও যা আয় করেন তা দিয়ে দুবেলা নুন ভাত খায়। আমাদের থাকার ঘরে বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে। খড়ও কোখাও কোথাও উঠে গেছে। ঘরটা মেরামত করতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের একটি ঘর দিত তাহলে শেষ বয়সে আরামে ঘুমাতে পারতাম। 

এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো.শামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বৃদ্ধ দম্পতির বিষয়টি আগে জানতাম না। তারা কোনোদিন আমার কাছে সহযোগিতার জন্য আসেননি। বৃদ্ধ দম্পতির খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

রনি মিয়াজী/এসপি