রইচ উদ্দীনের কাছে নতুন ঘর হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল

ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে গেলাম, কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। দিনমজুরের কাজ করেই সংসার চালাই। একদিন কাজ করতে না পারলে সংসার চলে না। বউ-বাচ্চাদের মুখে ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারি না। নিজের একটু জমি ছিল। সেটিও ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে শরিকরা। এখন শ্বশুরবাড়ির এলাকায় অন্যের জমিতে ঘর করে থাকি। দিনমজুর বলে কেউ কখনও সহযোগিতাও করে না। এভাবেই মনের দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন ৭০ বছর বয়সী দিনমজুর রইচ উদ্দীন সরদার।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর রইচ উদ্দীন সরদারকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর অনেক হৃদয়বান মানুষ তাকে সহায়তা করেন। বিষয়টি নজরে আসার পর ২১ অক্টোবর রইচ উদ্দীনকে নিজ কার্যালয়ে ডাকেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম মোস্তফা কামাল। তিনি রইচ উদ্দীনকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার  প্রতিশ্রুতি দেন। 

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, দিনমজুর রইচ উদ্দীনকে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যের একটি মানসম্মত ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। শেষ বয়সে যেন বৃদ্ধ মানুষটি পরিবার নিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারেন।

অবশেষে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে রইচ উদ্দীনের কাছে নতুন ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইয়ারুল হকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। 

রইচ উদ্দীন পেলেন নতুন ঘর

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার অর্থায়নে আমরা সকলে মিলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি রান্না ঘর ও একটি টয়লেট বিশিষ্ট ঘরটি নির্মাণ করা হয়। এই মহতী উদ্যোগটি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কাজটি করতে পেরে আমরা গর্বিত। 

ঘর হস্তান্তরকালে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, এই জেলার সকল ক্যাডারদের টাকায় ঘরটি আমরা করে দিয়েছি। এটি আমাদের অনেক ভালো লাগা। একজন অসহায় মানুষকে একটি থাকার ঘর তৈরি করে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। 

নতুন ঘর পেয়ে রইচ উদ্দীন সরদার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সবার জন্য দোয়া করি।

নিজস্ব ঘর না থাকায় রইচ উদ্দীন সরদার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ির পাশে থাকতেন। সেখানেই বসবাস করতেন স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে ও এক নাতিকে নিয়ে। এখন থেকে নিজ গ্রাম সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের নেবাখালী গ্রামে জেলা প্রশাসনের দেওয়া নতুন ঘরে বসবাস করবেন তিনি।

আকরামুল ইসলাম/আরএআর