টাঙ্গাইলে শহরকেন্দ্রিক কেন্দ্র থাকায় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না প্রান্তিক মানুষ

সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম চলছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় টিকাগ্রহণ করেছেন ৪৬ হাজার ৭৫৩ জন। তবে টিকাদানের ১৭ দিনেও সমাজের নিম্নবিত্তদের কাছে পৌঁছায়নি সরকারের টিকা কার্যক্রম। জেলায় যারা টিকা নিয়েছেন তাদের প্রায়ই উচ্চবিত্ত শ্রেণির। নিম্নবৃত্ত মানুষের দাবি করোনাভাইরাস টিকাগ্রহণের নিবন্ধনে জটিলতা আর শহরকেন্দ্রিক কেন্দ্র থাকায় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা।

সরেজমিনে গত সোম ও মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর এবং ভূঞাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্রে কথা হয়েছে শতাধিক টিকাগ্রহণকারীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬৫ শতাংশ পেশাজীবী ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৪ শতাংশ গৃহিণী ও ১ শতাংশ কৃষক টিকা নিচ্ছেন।

এই হিসেবে যারা টিকা নিতে আসছেন তারা সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ। সমাজের পিছিয়ে পড়া কৃষিজীবী ও শ্রমিকরা টিকা কার্যক্রমের আওয়তায় আসেননি এখনো। গ্রহণ করেননি করোনার টিকা।

এদিকে শহরকেন্দ্রিক টিকাকেন্দ্র, নিবন্ধন জটিলতা, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকাসহ প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনাগ্রাহী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন। তবে গ্রামপর্যায়ে সহজে টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করলে আগ্রহী হবেন মানুষজন।

এদিকে করোনার টিকা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ নেই কারো। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সঙ্গে থাকলেই কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে নিবন্ধন করার ব্যবস্থাও রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

ঘাটাইলের পাঁচটিকড়ী গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষজন কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়? কোথায় যেতে হয়? সেটাই জানি না।’

ভূঞাপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের আনিস হোসেন বলেন, ‘আমরা চরে বসবাস করি। এখানে টিকা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। মোবাইলও ব্যবহার করি না। তাহলে কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করব।’

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, টাঙ্গাইলে বাড়ি বাড়ি টিকা কার্যক্রম পৌঁছে দিতে না পারলে বড় অংশই এর বাইরে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে যেভাবে বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছিল তেমনি টিকাপ্রদানে প্রান্তিক মানুষের রেজিস্ট্রেশন কাজে সহযোগিতা করা হলে অনেকেই আগ্রহী হবেন।

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ কম। এ জন্য আমরা স্বস্থ্যকর্মীদের গ্রামে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পর্যন্ত প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ কম। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়াও সহযোগিতার জন্য জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এমএসআর