ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেই ভোট দিয়ে দেন নৌকার এজেন্ট
রায়পুরে ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে জোর করে নৌকায় ভোট দিয়ে দিয়েছেন এজেন্ট রাসেল। প্রতিবাদ করায় ভোটারকে ধাক্কা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন তিনি /ছবি ঢাকা পোস্ট
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পরপরই কালো পর্দার ভেতরে ঢুকে এজেন্টদের বিরুদ্ধে নৌকায় জোর করে ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে। এতে কয়েকটি কেন্দ্রে নিজেদের পছন্দের মার্কায় ভোট দিতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার ও চেঁচামেচি করতে ভোটারদের দেখা গেছে।
এ রকম একটি ঘটনায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দেনায়েতপুর নুরানি ও দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকার এক এজেন্ট ভোটারকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ভোটে অনিয়মের তথ্যচিত্র ধারণ করতে গেলে কেরোয়া সিরাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের ঢুকতে দেননি। একইভাবে শায়েস্তানগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ কেরোয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলকেন্দ্রে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেননি প্রিসাইডিং অফিসাররা।
এসব কেন্দ্রে ভোটাররা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পরপরই কালো পর্দার ভেতরে ঢুকে জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দিয়ে দিয়েছেন এজেন্টরা। ৪ নম্বর ওয়ার্ড মার্চেন্টস একাডেমি কেন্দ্রে অবৈধভাবে ভোট দেওয়ার চিত্র ধারণ করলে উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ ক্যামেরা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় সাংবাদিকের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ফুটেজ ডিলিট করে দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রায়পুর পৌরসভার ৭টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে প্রত্যেকটিতেই এসব চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ নম্বর ওয়ার্ড শায়েস্তানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান ও মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বাধা দেন। একইভাবে ৭ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ কেরোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেননি।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কেরোয়া সিরাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামও সাংবাদিকদের বাধা দিয়েছেন। তার দাবি, পর্যবেক্ষক কার্ড থাকলেও সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি নেই।
অন্যদিকে ভোটাররা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতেই আওয়ামী লীগের এজেন্টরা কালো পর্দার ভেতরে তড়িঘড়ি করে ঢুকে নৌকার বোতাম টিপে ভোট দিয়ে দেন। এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কয়েকজক কাউন্সিলর প্রার্থীও অভিযোগ করে জানান, নৌকায় ভোট দিতে গিয়ে এজেন্টরা পছন্দনীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর মার্কায় টিপ দিয়ে ভোট দিয়ে দেন। এ নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্ষুদ্ধ ছিলো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারা ভোটাররা। সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া কেন্দ্রগুলোসহ ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দেনায়েতপুর নুরানি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটেছে।
মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট রাসেল অন্যের ভোট দিয়ে দিয়েছেন। এতে প্রতিবাদ করতে গেলে রাসেল ওই ভোটারকে ধাক্কা দিয়ে মারধর করার চেষ্টা করেন। রাসেল পৌরসভার বাসিন্দা নয়, তিনি কেরোয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ভোটার।
এদিকে কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন হাতপাখার প্রার্থী আবদুল খালেক। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটগ্রহণে সমস্যা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শায়েস্তানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হাত পরিষ্কার করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে সমস্যা হয়েছে, তাদের এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্টরা জোরপূর্বক কালো পর্দার ভেতরে ঢুকে নৌকায় ভোট দিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ভোট দিতে না পারা ভোটাররা অভিযোগ করলেও তা কর্ণপাত করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৌখিক অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগের বহিরাগতরা এসে কেন্দ্র দখল করেছে।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। আমার বিরুদ্ধে শুরু থেকে বিএনপিসহ অন্য প্রার্থীরা অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন।’
রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বীপক বিশ্বাস বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় ছিলো ভোটকেন্দ্রগুলো। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটে অনিয়মের কোনো অভিযোগও পাইনি।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএসআর