রূপগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব ১৫ পরিবার
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক হৃদয়
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে ১৫টি কৃষক পরিবার। বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু রূপগঞ্জেই নয়, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতারণার মাধ্যমে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারকদের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলাও রয়েছে। রয়েছে তিন বছরের সাজাও।
নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো মামলা করেও এখন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রতারকরা বিভিন্নভাবে মামলার বাদীসহ অভিযোগকারীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
প্রতারক চক্রের মূল হোতার নাম মোজাম্মেল হক হৃদয় (৪৬)। তিনি কুমিল্লার বরুড়া থানার দেওয়াতলী গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবর থানার ঢাকা হাউজিং এলাকায়। বর্তমানে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হক হৃদয় ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ ভ্রমণ করে সেখানে চাকরিরত বাংলাদেশের সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তাদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন। শুধু তাই নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন মোজাম্মেল। গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার আদাবর থানা পুলিশ ঢাকা হাউজিং এলাকা থেকে মোজাম্মেল হক হৃদয়কে গ্রেপ্তার করেছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতারণার শিকার রফিজ উদ্দিন মিয়া জানান, তার ছেলে নাসির উদ্দিন মিয়া চীনের গোয়াংজু সিটিতে পড়াশুনা করতেন। দুই বছর আগে সেখানে প্রতারক মোজাম্মেলের সঙ্গে পরিচয় হয় নাসিরের। এর ছয় মাস পর নাসির গ্রামের বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন এলাকায় আসেন। মোজাম্মেল তাকে ঢাকার অফিসে যেতে বলেন। বনানী ও গুলশানে নামীদামি অফিস ভাড়া নিয়ে নিজের অফিস বলে পরিচয় দিতেন মোজাম্মেল। অফিসে গেলে নাসিরকে বলা হয়- কুয়েত আল-জাহারা মার্কিং ভার্জিনিয়া ক্যাম্পে শতাধিক লোক নেওয়া হবে মাত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এরপর নাসির তার বাবাকে বলে ছোট দুই ভাই সোহেল মিয়া ও আল-আমিন মিয়ার জন্য ৯ লাখ টাকা জমা দেন।
এ খবর আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারাও তাদের সন্তানদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বলেন। পরে একইভাবে চুক্তি করে কাঞ্চন এলাকার সোহেল মিয়া, আল-আমিন মিয়া, আরমান, মিলন, সমির বর্মণ, সজিব চন্দ্র বর্মণ, দয়াল বর্মণ, সবুজ, ইসমাইল, সোহানুর ভুইয়া, মুহাইমিন, জামান, ইছরাফিল, সোনারগাঁয়ের টুটুল চন্দ্র বর্মণ ও ভোলাব এলাকার মানিক মিয়া পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লাখ টাকা দেন মোজাম্মেল হক হৃদয়কে। টাকা নেয়ার পর মোজাম্মেল ওই ১৫ জনকে বিদেশে না নিয়ে গা ঢাকা দেন। ঘরবাড়ি, জমিজমা বিক্রি ও ধার-দেনা করে টাকা দিয়ে বিদেশে যেতে না পেরে এসব পরিবার এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
মোজাম্মেল হক হৃদয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে সোহেল মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় ও নাসির উদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা করেন। ওই দুটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মোজাম্মেল হক হৃদয়।
জানা গেছে, কুমিল্লায় নিজ গ্রামের ৭০ জনের কাছ থেকে একইভাবে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মোজাম্মেল হক হৃদয়ের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কুমিল্লার আদালতে প্রতারণার মামলায় (মামলা নং-১১২/১০) তিন বছরের সাজাও হয়েছে মোজাম্মেল হক হৃদয়ের। বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। বনানী এলাকায় মাদক বিক্রির অভিযোগে এসআই আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ওই মামলাটি করেন। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে কাগজপত্র জালিয়াতি করে প্রতারণার অভিযোগে বনানী থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। ওই মামলার বাদী পুলিশের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান। মামলা রয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটা থানায়ও। মামলা নং-১৬, তাং ২৩-০৬-২০০৯। মোজাম্মেল হক হৃদয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই। তার প্রতারণায় নিঃস্ব পরিবারগুলো টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছে।
এ সব ঘটনায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা রূপগঞ্জ থানার মামলাসহ অন্যান্য থানার মামলাগুলো আদালতে উত্থাপন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) মাহিন ফরাজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতারক মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে। আরেকটি মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী থানা থেকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে মোজাম্মেল কারগারে রয়েছে। তবে রূপগঞ্জ থানা ও নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা হওয়ার কারণে দু-একদিনের মধ্যে তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান মোবাইল ফোনে বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি।
মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/আরএআর