ঋণের টাকায় ঘুষ দিয়েও বাড়ি পেলেন না
ভুক্তভোগী নারীরা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহেল বাকীর বিরুদ্ধে অসহায়দের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, অসহায়, বিধবা, স্বামীহারা নারীরা ঋণ করে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও গবাদিপশু বিক্রি করে চেয়ারম্যানের হাতে টাকা তুলে দিয়েও ঘর পাননি তারা।
এখন চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানা টালবাহানা ও মানসিক নির্যাতন করেন বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী নারী।
বিজ্ঞাপন
তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম কথা হয় ঘর না পাওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। তারা সবাই ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধিকে জানান, টাকা দিয়ে ঘর পাননি। কিন্তু এখন টাকা চাইলে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো গালিগালাজ করেন।
ইউনিয়নের নওখাদা মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুল রতনের স্ত্রী মোছা. শাহনাজ পারভীন (৫৬) বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর দিচ্ছেন জানতে পেরে আমি চেয়ারম্যানের কাছে যাই। তখন তিনি ঘরের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি তাকে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, পাঁচ হাজার টাকা ছেড়ে দিলাম, ১৫ হাজার টাকা দাও। পরবর্তীতে আমি সুদের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে দিই। দুই মাস পরে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে বলেন বাকি পাঁচ হাজার টাকা দিতে, নইলে ঘর পাব না। আমি আবারও পাঁচ হাজার টাকা দিই।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, পরবর্তীতে প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও টাকাও দেন না, ঘরও দেন না। আমি টাকা চাইলেই তিনি গালিগালাজসহ চরম খারাপ ব্যবহার করেন। আমার চোখের অপারেশনের জন্য টাকা দরকার হলে আমি চেয়ারম্যানের কাছে তিন হাজার টাকা ফেরত চাই। তিনি চরম দুর্ব্যবহার করে পরিষদ অফিস থেকে আমাকে বের করে দেন। আর টাকা ঘরের জন্য ইউএনও অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইউনিয়নের ধামাইচ গ্রামের স্বামীহারা শিউলি খাতুন (৪৫) বলেন, আমি ঘরের জন্য দুই ধাপে ২০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দিই। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি ঘরও দেন না, আবার টাকাও ফেরত দেন না। বরং টাকা চাইলেই খারাপ ব্যবহার করেন। আমি এখন ঘর না পেলেও আমার টাকা ফেরত চাই।
স্বামী-পরিত্যক্তা মোছা. হালিমা খাতুন (৫০) বলেন, আমি চেয়ারম্যানের কাছে ঘরের জন্য গেলে টাকা ছাড়া ঘর হবে না বলে তিনি ২০ হাজার টাকা চান। আমি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিই। কিন্তু বছরের পর বছর যাচ্ছে, টাকা বা ঘর কোনোটাই দিচ্ছেন না। স্বামী নাই, তাই নিজে মাঠে কাজ করে খাই, ভাঙা ঘরে থাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আপনাদের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানাচ্ছি, তিনি হয় আমাকে ঘর দিন, নইলে টাকাগুলো ফেরত দিন।
ইউনিয়নের নওখাদা গ্রামের মো. সাঈদের স্ত্রী সাকিনা খাতুনও (৪৫) অন্যদের মতো সরল মনে একটি ঘর পাওয়ার আশায় ২০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে জানান, এখন আপনাদের কাছে বিচার চাই। আপনারা হয় আমার ঘর পাওয়ার ব্যবস্থা, নয়তো টাকা ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
ভুক্তভোগী নারীরা জানান, এ রকম অসংখ্য মানুষের কাছ থেকেই চেয়ারম্যান ঘর দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কেউই ঘর পাননি, টাকাও পাননি। চেয়ারম্যানের ভয়ে তারা কথা বলতেও সাহস পান না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সগুনা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহেল বাকীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি মহল নির্বাচন সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব নারী অভিযোগ করেছেন, আমি তাদের চিনিও না।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি। তবে অভিযোগ এলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
শুভ কুমার ঘোষ/এনএ