বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন

ফেনীতে বহুতল ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা গ্যাসের লিকেজ ও মশা নিধনের ব্যাট থেকে ঘটেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্ত শেষে এই তথ্য জানিয়েছেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরন্নবী। শনিবার (৬ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে শুক্রবার (৫ মার্চ) মধ্যরাতে ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের দুলামিয়া বাইলেনের শফিক ম্যানশনের একটি ছয় তলা ভবনের পঞ্চম তলায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘরে থাকা মা ও দুই মেয়ে দগ্ধ হন। দগ্ধদের প্রথমে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের রাতেই ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণে ওই ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলারও ক্ষতি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরন্নবী বলেন, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। বিস্ফোরণে বাসায় থাকা মা মেহেরুন নেছা (৪০) ও তার দুই মেয়ে দগ্ধ হন। মা ও এক মেয়ে হাফসা ইসলামকে (১৪) ঢাকায় নেওয়া হয়। ওই বাসার গৃহকর্তা প্রবাসী। বিস্ফোরণে বাসার জানালার গ্রিল ভেঙে গেছে। বারান্দার দেয়াল ভেঙে পাশের ভবনের ছাদে গিয়ে পড়েছে। বাসার ভেতরে জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

 সংবাদ সম্মেলনে ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরন্নবী

পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী, আহতদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে গ্যাসের চুলার লিকেজ এবং মশা নিধনের ব্যাট থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

খোন্দকার নূরন্নবী বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর অনেকেই মোবাইল বিস্ফোরণ অথাব বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হতে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে এন্টি টেররিজম ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ দল, সিআইডির একটি দল ও পিবিআইয়ের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে তারা জানান, ৫ তলায় গ্যাসের চুলায় লিকেজ হয়ে ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ৪, ৫ ও ৬ তলার প্রায় সব ইউনিটেই গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারার চেষ্টা করলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এখানে বোমা অথবা মোবাইল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে ফেনী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জাকের হোসেন, ডিএমপি থেকে আগত চার সদস্যের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের টিম লিডার পরিদর্শক মোদাচ্ছের কায়সার উপস্থিত ছিলেন। 

বিস্ফোরণে দগ্ধরা হলেন- মা মেহেরুন নেছা (৪০), দুই মেয়ে ফারাহ ইসলাম (১৮) ও হাফসা ইসলাম (১৪)। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকায়। মেহেরুন নেছার স্বামী মাহফুজুল ইসলাম দুবাই প্রবাসী। দগ্ধদের মধ্যে মেহেরুন নেছা ও হাফসা ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের দুইজনের দেহের ৬০ ভাগ ঝলসে গেছে। তারা দুইজনই আইসিইউতে আছেন।

মেহেরুন নেছার শ্বশুর আবুল কাশেম জানান, মেয়েদের স্কুল কলেজে পড়ালেখা করানোর জন্য প্রায় এক যুগ ধরে তারা শফিক ম্যানসনের ৫ তলার পূর্ব পাশের ইউনিটে বসবাস করেন। তার বড় নাতনি ফারাহ ইসলাম (১৮) ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছেন। ছোট নাতনি হাফসা ইসলাম (১৪) ভবনের পাশে অবস্থিত হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বউমা মেহেরুন নেছা তাদের দেখাশোনা ও পড়ালেখার জন্য মূলত শহরে থাকতেন।

হোসাইন আরমান/আরএআর