জন্মান্ধ হরিবল বোনার্জি এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। জন্ম থেকেই চোখে না দেখতে পাওয়া হরিবল নিজের মনোবল আর শিক্ষকদের প্রচেষ্টার এই ফলাফল অর্জন করেছেন।

হরিবল বোনার্জির বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানে। মা বিশখা বোনার্জি ও বাবা অনিল বোনার্জি দুজনের চা বাগানের শ্রমিক। সে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা অংশ নেয়।

হরিবলের প্রাথমিকের পড়ালেখা শুরু হয় এনজিও ব্রাকের স্কুল থেকে। সেখান থেকে ভালো ফলাফলে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের আবাসিক হোস্টেলের থেকে পড়ালেখা করেছে হরিবল।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় হরিবল বোনার্জির। তিনি বলেন, আমি যে পড়ালেখা করে এতদূর এগিয়ে আসতে পারবো সেটা কখনো ভাবতেই পারিনি। আমরা পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর লোক। ব্রাকের স্কুলে থেকে আমি পিএসসি পরীক্ষা দেই। জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করি। এরপর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জন্মে যায়। ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সমাজসেবা অফিসের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পরা চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে টিউশনিও পড়িয়েছি। করোনাকালীন সময়ে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন আমার গ্রামের শিক্ষার্থীদের এক সঙ্গে নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পড়ালেখার জন্য আসলে দিনে একটানা দশ ঘণ্টা পড়তে হয় না। মনযোগ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পড়লেই হয়। পরীক্ষার হলেও আমি অন্যান্য সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। শুধুমাত্র আমার সহযোগী হিসেবে অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ছিল। আমি বলে দিয়েছি আর সে লিখে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিল একজন গায়ক হওয়ার। অনেকটা পথও এগিয়েছিলাম। কিন্তু আর গায়ক হয়ে ওঠা হয়নি। এখন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষক হতে চাই।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. খ. ম ফারুক আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমদের একজন অন্ধ ছাত্র হরিবল বোনার্জি এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে গরীব পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করি এই ফলাফল অর্জন করেছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি। আশা করি সে তার জীবনে সফল হবে। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরকে