ফাইল ফটো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের জমিতে বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে গ্রামবাসীর দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েন। তবে, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কলিংগা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
 
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ডাঙ্গা কাজিরচর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তর পার্শ্বে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানি অবস্থিত। আর এ কোম্পানির সীমান্তবর্তী এলাকা হলো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার দাউদপুর কলিংগা এলাকা। 

আর কলিংগা গ্রাম পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে। ওই কোম্পানির সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষ কলিংগা গ্রামের শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে বেশ কিছু জমি ক্রয় করেন গাড়ি পার্কিং ও জেটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে। তবে অনেকের জমি কেনা হয়নি বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। আর সেখানে পুরো জমি না কিনে গাড়ি পার্কিং ও জেটি নির্মাণের লক্ষে বালু ভরাট করতে গেলে সোমবার সকালে গ্রামের লোকজন বাঁধা দেয়। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে সমঝোতা করে বালু ভরাট করতে অনুরোধ জানানো হয়।

দুপুর ১টার দিকে গ্রামবাসীর বাধা না মেনে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির নিয়োজিত লোকজন বালু ভরাট করতে থাকেন। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে কোম্পানির লোকজনের বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির লোকজন গ্রামবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় গ্রামবাসীও পাল্টা হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষ দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। 

সংঘর্ষে পথচারী কামাল হোসেনসহ কলিংগা গ্রামের কাইয়ুম, ফোরকান, ফয়সাল মিয়া, সানি, বিপ্লব, বেলায়েত, ফয়সাল আহাম্মেদ, আল-আমিন, তপু, রাসেল, প্রাণ আরএফএল কোম্পানির আজিম, রাসেল, মাহমুদ, শিশিরসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। 

এ বিষয়ে জমির মালিক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারসহ হারেছুল, জুলহাস, কাইয়ুম, খালেকসহ বেশ কয়েকজনের জমি না কিনেই জোরপূর্বক বালু ভরাট করতে যায় প্রাণ আরএফএল কোম্পানির লোকজন। বাধা দিতে গেলেই ওই কোম্পানির এডমিন ম্যানেজার ফয়সাল আহাম্মেদের নেতৃত্বে বহিরাগতদের দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। 

এ ব্যাপারে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এডমিন ম্যানেজার ফয়সাল আহাম্মেদ বলেন, আমাদের নিজের জমিতে বালু ভরাট করছিলাম। স্থানীয় কিছু লোকের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
 
এ বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাষ্টার বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ বা দাবির বিষয়টি শুনে কোম্পানি বালু ভরাট করলেতো এ সমস্যা হতো না।
 
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেনি। এলাকায় পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। 

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/এমএএস