আমি এহনো একবেলা ভাত খাই। যেন তিনবেলা ভাত খাইতে পারি, সে ব্যবস্থা কইরা দেন। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সোমবার (০৮ মার্চ) দুপুরে এমন আকুতি জানালেন ফাতেমা বেগম (৭০)। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু পার্কের ফুটপাতে ভিক্ষা করছিলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাতেমা বেগমের বাড়ি নরসিংদী সদরে। স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি চলে যান। স্বামী আবদুল হামিদের সহায়-সম্পদ ছিল না। কুলির কাজ করে সংসার চালাতেন। মা-বাবার মৃত্যুর পর স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন ফাতেমা।

১৫ বছর আগে স্বামী মারা যান। তখন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন নরসিংদীতে। সদরে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে থেকে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে চলছিল সংসার।

ফাতেমা বেগম

ছেলে বকুল মিয়া বড় হয়ে কাজ শুরু করেন পোশাক কারখানায়। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে পৃথক সংসার পাতেন বকুল। মাকে দূরে সরিয়ে দেন। 

এ অবস্থায় আরেকজনের বাসায় কাজ নেন ফাতেমা। কাজ ভালো হচ্ছে না বলে প্রতিদিন রাগারাগি করতেন গৃহকর্ত্রী। হঠাৎ একদিন ফাতেমার চোখে লাথি দেন গৃহকর্ত্রী। পরে কাজ ছেড়ে দেন। কিন্তু আজো চোখ দিয়ে পানি পড়ে ফাতেমার। মাথা ও চোখ ব্যথায় ভোগেন সবসময়।

ফাতেমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নরসিংদীর আরশিনগর এলাকায় এখন আমার বাসা। মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া। ভিক্ষা করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে একবেলা খাই। দুই বেলা না খেয়ে থাকি। শেষ কবে তিনবেলা ভাত খেয়েছি ভুলে গেছি। তিনবেলা ভাত খেলে বাসা ভাড়া ও সংসার চালাবে পারব না। এজন্য একবেলা খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি।

‌‌সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা কত কিছুই দেয়। আমি কিছুই পেলাম না। আমার কেউ নেই, থাকার জায়গা নেই। যখন ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারি না তখন বিস্কুট খেয়ে দিন পার করি।

ফাতেমা বেগম, ভিক্ষুক

নারী দিবসের বিষয়ে কিছু জানেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা বেগম উল্টো জানতে চান নারী দিবস মানে কী?

তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। দিবস বুঝি না। আমার পেটে অনেক ক্ষুধা। আমি শুধু ঠিকমতো তিনবেলা ভাত খেতে চাই। তিনবেলা ভাত ছাড়া কিছুই চাওয়ার নেই।

ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের কাজ চলমান। করোনা পরিস্থিতির আগেও কার্যক্রম চলছিল। লকডাউনে পুনর্বাসন কাজে স্থবিরতা যায়।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সদরের ভিক্ষুকদের তালিকা করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। নির্দেশনা পেলে আবার ভিক্ষুক পুনর্বাসন শুরু হবে।

ইউএনও তাছলিমা আক্তার আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলার ২২১ গৃহহীন পরিবারকে সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার চারজন সরকারি ঘর পেয়েছেন। পলাশ উপজেলার ২৫ পরিবার, শিবপুর উপজেলার ৪২, মনোহরদী উপজেলার ৪৫, বেলাব উপজেলার ৭০ এবং রায়পুরা উপজেলার ৩৫ পরিবার সরকারি ঘর পেয়েছেন। আরও ২০টি ঘরের চাহিদা পাঠিয়েছি। সেগুলো পর্যায়ক্রমে গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে বণ্টন করা হবে। 

রাকিবুল ইসলাম/এএম