সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, ডিসেম্বর মাসকে কেন্দ্র করে আজকে আমাদের দেশের রাজনীতি অশান্ত হয়ে উঠেছে। আমি জানি না এই বিজয়ের মাসে কী এমন ঘটেছে যে, এই ডিসেম্বর মাসেই আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীনতাকামী মানুষকে একনাগাড়ে হত্যা, সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা শুরু হয়েছিল। আবারও আপনারা সেই রক্তাক্ত ডিসেম্বরকে পুনর্জীবিত করতে চান- এটি আমার প্রশ্ন।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে ‘বিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গণহত্যা : পরিণাম, প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

কে এম খালিদ বলেন, এই বিজয়ের মাসে বাংলাদেশকে মেধাহীন করার জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ডিসেম্বর মাসে অশান্ত করে তুলতে হবে রাষ্ট্রকে? আর কি সময় ছিল না। আজকে রাষ্ট্রের এই স্বাধীনতাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। মেনে নিতে পারেনি বলেই ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে তারা নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। 

তিনি বলেন, যারা আজকে বিরোধী দলে, যারা গণতন্ত্রের দাবিদার, তারাই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমরা চেয়েছিলাম এই বিজয়ের মাসে বিজয়ের পতাকা ধরে রাখার জন্য সর্বাত্মকভাবে আমরা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে এগিয়ে যাবো। কিন্তু এই বিজয়ের মাসেই যেন তাদের মাথায় বাজ পড়ে যায়। বিজয়ের মাস আসলেই তারা দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়।

কে এম খালিদ বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার পরোক্ষ নির্দেশনায় জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জাতির পিতার রক্ত জিয়াউর রহমানের হাতে ছিল। একটি পরিবারের সবাই ধারাবাহিকভাবে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত, তার স্ত্রী আইভী রহমান হত্যার সাথে জড়িত এবং তার পূত্র তারেক রহমান আইভী রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। আর তারা কিনা বলে আজকে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। যেটি সত্য সেটি আজ হোক, কাল হোক বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন নয় মাস এদেশের মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা নির্যাতন ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। খুলনার চুকনগরে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন ক্যাম্পে নিজে আটক থাকার কথা স্মরণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে দেশপ্রেমিক বাঙালিদের অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে প্রতিদিন অসংখ্য নারী-পুরুষের লাশ ভেসে যেতে দেখেছি। বিজয়ের পর দেখা যায় ময়মনসিংহসহ সারাদেশের বধ্যভূমিগুলোতে হাজার হাজার মানুষের লাশ শেয়াল-শকুনে খাচ্ছে আর মানুষেরা তাদের হারানো স্বজনের লাশ খুঁজে ফিরছে। আজকের তরুণ প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের এই ইতিহাস জানাতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আজকের সম্মেলনে অনেকেই এসেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার কথা আমরা ভুলিনি। ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলো এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান ছিল।

গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র এবং ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের চারটি অধিবেশনে দেশ-বিদেশের প্রায় ২০ জন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর