নুর মিয়া হাজী। ২০১৮ সালে তাবলিগ জামায়াতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে তিনি দেখেন পুকুরে বড় বড় মাছের চাষ হচ্ছে। কথা বলে জানতে পারেন, ওই পুকুরে চাষ করা একটি কাতল মাছের বয়স ১৪ বছর। তিনি সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হলেন। দেশে ফিরে এমন মৎস্য খামার গড়ার চিন্তা করলেন। যেই ভাবনা সেই কাজ। দেশে ফিরে তিনি তার বোরো ধানের ৬ একর জমিতে গড়ে তোলেন মৎস্য খামার। এখন তিনি একজন সফল মৎস্য খামারি।

নুর মিয়া হাজীর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান কালাস গ্রামে। তার এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা ছিল।  ডাম্পের বাজারে দোকানও ছিল। পাটলাই নদীর ওপর নতুন বাজার ও ডাম্পের বাজারস্থ ব্রিজ হওয়ায় তাকে দোকান ছেড়ে দিতে হয়েছে।

নুর মিয়া হাজী তাবলিগ জামাতের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইন্দোনেশিয়ায় পুকুরে মাছচাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে তৈরি করেছেন বড় মৎস্য খামার। বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন চারজন।

মাছের খামারের ম্যানেজার ও নুর মিয়ার মেয়ের জামাই মো. এনামুুল হক। তিনি বলেন, ৬ একর জমিতে ফসল চাষ করতে কষ্ট হয়। তাই আমরা মাছের খামার করেছি। এর আগে রাস্তার পাশে ৩০ শতাংশ জমিতে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেছিলাম। সেখান থেকে অনেক লাভবান হয়েছি। এরপর হাজী সাহেবের পরামর্শে ২০ কেয়ার জায়গা খনন করে পুকুর করি। ২০১৮ সালের মার্চের প্রথম দিকে পুকুর খননের কাজ শেষ হয়। এই জায়গাতে তিনটি পুকুর হয়েছে।

পুকুরে মাছকে খাবার দেওয়া হচ্ছে

 তিনি আরও বলেন, মাটি খনন করে পুকুরের পাড় নির্মাণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত মাটি দিয়ে রাস্তার পাশে উঁচু করে সেখানে ফলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নতুন মাটি যেন অন্যের জমিতে না যায় সেজন্য চারদিকে পাকা দেয়াল করা হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

পুকুরের আরেক ম্যানেজার সুবল পাল বলেন, পুকুরে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, মৃগেল, ব্রিগেড, সিলভারসহ নানা জাতের মাছ চাষ হচ্ছে। বছরে একবার মাছ বিক্রি করি আমরা। মৎস্যচাষে আমরা সবাই একেবারে নতুন। 

এ পর্যন্ত কত টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। প্রতি বছরই চৈত্র মাসে মাছ ধরা হয়। মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। একটু শ্রম দিলে এই খাতে যে কেউ সফল উদ্যোক্তা হতে পারবে। 

উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা মো. বাবর আলী বলেন, হাজী সাহেব মৎস্য খামার নিয়ে খুব সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। উনার এই উদ্যোগ নিয়ে আমাদেরও চিন্তা করা দরকার। বেকার হয়ে বসে না থেকে এ রকম মৎস্য খামার করে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়া যাবে। এতে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরও কয়েকজন বেকার কাজ পাবে।

আমাদের হাওরাঞ্চলে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এখানে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে খুবই কষ্ট হয়। একেকটা সময়ে একেকটা কাজ থাকে। অনেক সময় বছরের ৩-৬ মাস কাজ থাকে। অন্যসময় বেকার বসে থাকতে হয়। এই অবস্থায় হাজী সাহেব অনেক বড় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। মৎস্য খামারের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের গাছ রোপণ করেছেন। উনার এই কাজ দেখে আমরা যুব সমাজ উৎসাহ পাচ্ছি।

আবুল হাসনাত খাঁন কাজল, তরুণ উদ্যোক্তা

জেলা মৎস্য অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, মাছ চাষে তরুণদের আমরা উৎসাহ দিয়ে থাকি। মো. নুর মিয়া হাজী খুব চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন। উনার প্রায় ৬ একর বোরো ধানের জমিকে পুকুর বানিয়েছেন। সেখানে এখন মাছ চাষ করছেন। এতে এলাকার তরুণরাও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, উৎসাহ পাচ্ছেন। বেকার তরুণরা এরকম উদ্যোক্তা হলে মৎস্য অফিস তাদের পাশে থাকবে।

এসপি