চার বছর বিদেশ থেকে এখন এক মোটরসাইকেলই ভরসা
বিদেশ থেকে ফিরে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন পটুয়াখালীর ফিরোজ খান নামে এক যুবক
বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। বদলে যাচ্ছে সময়। হাজারো স্বপ্ন বুকে নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান বত্রিশ বছর বয়সী যুবক ফিরোজ খান। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে রাত-দিন এক করে কাজ শুরু করেন। বেশ ভালোই চলছিল ফিরোজের প্রবাস জীবন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তার জীবনে হতাশা নেমে আসে। এরপর ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসেন। পাওনাদারদের কারণে ধারদেনা করে একটি মোটরসাইকেল কেনেন। বর্তমানে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-বরিশাল সড়কে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
প্রবাসী ফিরোজ খানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। ফিরোজ খান বলেন, মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর আগে মোটরসাইকেল চালাইতাম। পরিবার ও নিজের ভাগ্য বদলাতে ২০১৫ সালে পাসপোর্ট করি। এরপর স্বপ্নের দেশে যাওয়ার জন্য কৃষক বাবার জমি বিক্রি করে এক লাখ টাকা ও বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদে চার লাখ টাকা সংগ্রহ করি। মোট পাঁচ লাখ টাকা এজেন্সির কাছে জমা দেই।
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে দুই বছরের ফ্রি ভিসার (উন্মুক্ত ভিসা) মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া যাই। মালয়েশিয়া গিয়ে কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কাজ শুরু করি। প্রতিদিন কাজ করে ৭০ টাকা (বাংলাদেশের ১৫০০ টাকা) আয় হতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের জামুরা এলাকার বাসিন্দা কৃষক মো. বারেক খান সদর উপজেলার টাউন জৈনকাঠি এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চন হাওলাদারের মেয়ে ফিরোজা বেগমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বারেক-ফিরোজা দম্পতির ঘর আলো করে একে একে দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ফিরোজ খান তাদের দ্বিতীয় সন্তান। লাউকাঠি এলাকার বাসিন্দা মন্নান চৌকিদারের মেয়ে শাহিদা বেগমকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
বিজ্ঞাপন
ফিরোজ খান বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রতিদিন যে টাকা আয় হতো সব টাকা জমিয়ে রাখতাম। শুধু খাবারের জন্য কিছু টাকা খরচ করতাম। বাকি টাকা দেশে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য পাঠাতাম। সেই টাকা দিয়ে বাসার খরচ দিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করত তারা।
বাড়িতে ঘর তুলতে গিয়ে আবারও ধারদেনায় পড়ি। মালয়েশিয়া যদি থাকতাম তাহলে ভালো থাকতাম। করোনাভাইরাস আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এতোদিন বিদেশে ছিলাম পরিবার শান্তিতে ছিল। দেশে আসার পর পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।
এরপর ধারদেনা করে একটি মোটরসাইকেল কিনি। এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালাই। দেনা পরিশোধ করি। মোটরসাইকেল চালাতে পরিশ্রম অনেক। বিদেশের মাটিতে পরিশ্রম করলে টাকা বেশি আয় হয়। দেশের মাটিতে সমপরিমাণ শ্রম দিলেও সেই টাকা আয় হয় না। দেশে আছি পরিবারকে সুখ-শান্তিতে রাখার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোটরসাইকেলে তেমন আয় নেই। মানুষ আমার কর্ম দেখে হাসে। প্রবাসে এতোদিন ছিলাম এখন দেশে এসে মোটরসাইকেল চালাই। এরপরও হতাশ হইনি। মানুষতো আর আমাকে টাকা দিয়ে যাবে না। পরিবারকে শান্তিতে রাখতে তাই দেশে মোটরসাইকেল চালাই।
প্রবাসে যাওয়ার ইচ্ছে সম্পর্কে তিনি বলেন, আবারও মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা বলে, আবারও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে কোম্পানিকে। আমার হাতশূন্য। এই মুহূর্তে এতো টাকা দিব কীভাবে। সরকার যদি একটা সুযোগ করে দেয় তবে আবারও মালয়েশিয়া যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
লাউকাঠির জামুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. সজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাসী ফিরোজ খান কঠোর পরিশ্রমী একজন মানুষ। সকালে গাড়ি (মোটরসাইকেল) নিয়ে বাসা থেকে বের হন। রাত ১২টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকে। এই মানুষের সফলতা আসবে। তার (ফিরোজ) কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদেশ যাওয়ার আগে অনেকে ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে থাকাকালীন অনেকে ধার পরিশোধ করে। আবার অনেকে টাকা পরিশোধ করতে পারে না। অনেক প্রবাসী করোনার কারণে দেশে চলে এসেছে। তারা তাদের দেনা পরিশোধ করতে পারেনি। সরকার যদি তাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে এসকল মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারে।
এসপি