লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়ালসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা মো. সবুজকে হত্যাচেষ্টা ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলাটি তুলে না নিলে সবুজসহ তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভুক্তভোগী সবুজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্তদের হুমকিতে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আদালতের নির্দেশনা পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন।

এর আগে ১৪ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে যুবলীগ নেতা সবুজের স্ত্রী ফাহিমা বেগম বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়ালসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

ভুক্তভোগী সবুজ চররমনী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক ও উত্তর চররমনী মোহন গ্রামের মৃত আমির হোসেন ছৈয়ালের ছেলে।  

বাদীর আইনজীবী আশিকুর রহমান বলেন, অভিযোগটি আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন আমলে নিয়েছেন। এ ঘটনায় এফআইআর দাখিল করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়ালের ছেলে আবু সুফিয়ান ছৈয়াল, কাজল ছৈয়াল ও ইয়াকুব ছৈয়াল। তারা সদর উপজেলার চররমনী মোহন গ্রামের বাসিন্দা।

এজাহার সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়ালদের সঙ্গে সবুজদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরেই শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউনিয়নের উত্তর চররমনী মোহন গ্রামের ছোট ব্রিজ এলাকায় লোকজন নিয়ে সবুজের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এসময় সুফিয়ান লাথি দিয়ে তাকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরে সুফিয়ানসহ তার লোকজন জিআইপাইপ ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে সবুজকে রক্তাক্ত জখম করে। মারধর সহ্য করতে না পেরে সবুজ পাশের খালে ঝাঁপ দেয়। সেখান থেকে তুলে এনে ফের মারধর করে হামলাকারীরা। পরে মৃত ভেবে সুফিয়ান ও তার লোকজন চলে যায়। ঘটনার সময় সবুজের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও ৬ মাসের শিশু আলিফা সঙ্গে ছিল। খবর পেয়ে সবুজকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা। পরে তাকে ঢাকায় ধানমন্ডির নিউ লাইফ হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এখন তাকে বাড়িতে রাখা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মো. সবুজ বলেন, ইউছুফ ছৈয়ালের নির্দেশেই তার ছেলেরা আমার ওপর হামলা করেছে। আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে আমার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এখন মামলাটি তুলে নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। দ্রুত মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

অভিযুক্ত আবু সুফিয়ান ছৈয়াল বলেন, সবুজকে কে বা কারা মারধর করেছে তা আমার জানা নেই। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। হয়রানির উদ্দেশ্যে আমার বাবাকেসহ আমাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

বক্তব্য জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়ালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে যুবলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনার পরদিন চেয়ারম্যান ছৈয়াল বলেছেন, আহত সবুজ আমার ভাতিজা। তার চিকিৎসার সব খরচ আমি দেব বলেছি। মারধরের সময় আমার ছেলেসহ অন্যরাও ছিল।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস