মদনটাকের ঘরে এল নতুন অতিথি
মদনটাকের ডিম থেকে ফুটেছে দুটি ছানা
একসময় দেশের সব জেলায় মদনটাকের দেখা মিললেও এখন স্থান নিয়েছে মহাবিপন্নের তালিকায়। তবে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি মদনটাক উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। পার্কের বেষ্টনীতে এ পাখিটিকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ায় বাড়ছে তার পরিবারের সদস্যসংখ্যা।
গত শুক্র ও মঙ্গলবার সাফারি পার্কের মদনটাকের ডেরায় ডিম থেকে দুটি ছানা ফুটেছে। মহাবিপন্ন তালিকার সদস্যসংখ্যা বাড়ায় পাখিটি ঘিরে আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন ছানাসহ মদনটাকের পরিবারে সদস্যসংখ্যা পৌঁছাল ৯-এ।
বিজ্ঞাপন
সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী সুপারভাইজার (বন্য প্রাণী পরিদর্শক) আনিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পাখি সাধারণত বড় বিলের কাছে, নদীর মোহনায় বসবাস করে থাকে। তবে আমাদের দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বে এর দেখা মেলা ভার। স্থানীয়ভাবে অনেকেই মদনটাক পাখিকে হাড়গিলাও বলে থাকে। মদনটাক প্রধানত জলচর পাখি হিসেবে পরিচিত। এরা সিকোনিডাই পরিবারভুক্ত বিধায় এ গণের অন্যান্য প্রজাতির ন্যায় এরও নগ্ন ঘাড় ও মাথা রয়েছে।
তিনি জানান, মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। প্রজনন মৌসুম ছাড়া একাকী নিভৃতচারী পাখি হিসেবে এরা পরিচিত। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এরা বাসা বাঁধে। ডালপালা দিয়ে তৈরি বাসায় স্ত্রী মদনটাক তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩০ দিন পর ডিম থেকে ছানার জন্ম হয়। এরা তেমন কোনো শব্দ করে না। এদের ওজন হয় পাঁচ থেকে সাত কেজি পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
মদনটাকের মূল অস্তিত্ব দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। আমাদের দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে মাঝেমধ্যে এর দেখা মেলে। ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুর ও চীন থেকেও এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেন জানান আনিছুর রহমান।
কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্য প্রাণিবিদ আলম শাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৃতিতে মদনটাক একসময় খুব দেখা গেলেও বর্তমানে প্রাণীটি মহাবিপন্ন। তবে মাঝেমধ্যে সুন্দরবন ও কুড়িগ্রামের দিকে এদের দেখা মিলত, বর্তমানে তাও দেখা যাচ্ছে না। সাফারি পার্কের বেষ্টনীতে বদ্ধ পরিবেশে মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা মদনটাক থেকে বাচ্চা পাওয়া অবশ্যই একটি ভালো খবর। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো এই সাফারি পার্ক থেকেই মদনটাক পরিবেশে ফিরতে পারবে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তন, বসবাসের জায়গা নষ্ট, ফুড চেইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় মদনটাকের অস্তিত্ব আজ মহাবিপন্নের তালিকায়। তবে আমাদের সাফারি পার্কের মদনটাকের ডেরায় তাদের বসবাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করায় ছানার জন্ম হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যেই আশার সঞ্চার হচ্ছে। সাফারি পার্কে মদনটাকের ডেরায় এ মৌসুমে একটি স্ত্রী মদনটাক তিনটি ডিম দিয়েছিল, তা থেকে দুটি ছানার জন্ম হয়েছে। আমাদের আশা, আরও একটি ছানার জন্ম হবে।
শিহাব খান/এনএ