মৃত স্বজনের টাকা তুলতে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন নিহত ৯ জন
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নারী-শিশু ও দুই শিক্ষার্থী রয়েছেন। রোববার (২১ মার্চ) সকালে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারা।
মধুখালীতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নয়জন এবং ভাঙ্গা উপজেলার বিশ্বরোডে প্রাইভেটকার-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী নিহত হন।
বিজ্ঞাপন
মধুখালীতে নিহত নয়জনের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এক পরিবারের নিহত ছয়জন হলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়াতে প্রতিপক্ষের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে নিহত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য মেহের ওরফে কাজলীর মা মিয়াজান বিবি (৬৮), বোন আমেনা বেগম (৪৮), স্ত্রী কুটি বিবি (৪২), মেয়ে মরিয়ম (২৫), জামাতা জুয়েল রানা (৩২) এবং মরিয়ম-জুয়েলের চার মাসের শিশু মুজাহিদ।
বিজ্ঞাপন
নিহত অপর তিনজন হলেন আইনজীবী আব্বাস উদ্দিন (৪৮), মাতুব্বর নজরুল ইসলাম (৬০) ও গাড়িচালক আল আমিন (৩০)।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কুদ্দুছ (৩০), নূরুন্নাহার (৩৫), আলামিন (২৫), রাশিদা (৩৫) ও আবদুল্লাহ (৪)। নিহতদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেষপুর উপজেলার কাজীর বেরিয়া ইউনিয়নের সামন্তখোলা গ্রামে।
ফরিদপুরে তাদের মরদেহ বুঝে নিতে এসেছেন কাজীর বেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএন সেলিম রেজা। সামন্তখোলা গ্রামটি কাজীর বেড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।
ইউপি চেয়ারম্যান বিএন সেলিম রেজা বলেন, আমার ইউনিয়নের জন্য এটি বিপর্যয়কর ঘটনা। এতগুলো লাশ একসঙ্গে দেখেনি আমি। জানি না মরদেহগুলো গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। পুরো ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমেছে।
তিনি বলেন, নিহত জুয়েল রানার এক আত্মীয় গত বছর মারা গেছেন। ঢাকার একটি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট ছিল। ওই অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলনের জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন জুয়েল ও তার পরিবারের সদস্যরা। পথিমধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা। তাদের সঙ্গে একজন আইনজীবীও ঢাকায় যাচ্ছিলেন, তিনিও মারা গেছেন।
মধুখালী দমকল বাহিনীর স্টেশন কর্মকর্তা টিটোব সিকদার বলেন, আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার পর চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান। এছাড়া ঘটনাস্থলে দুজন মারা যান।
কমিরপুর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাওসার হোসেন বলেন, ঝিনাইদহ থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাঝকান্দি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসে থাকা এক নারী ও এক পুরুষ নিহত হন। আহত হন মাইক্রোবাসের ১২ যাত্রী। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও সাতজন মারা যান। ট্রাকটি জব্দ করলেও চালক পালিয়ে গেছেন।
ঘটনার পর ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা, জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সীমা রানী সাহা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নিহত প্রত্যেককে ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। অন্যদের আর্থিক পরিস্থিতি দেখে সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে, ভোরে ভাঙ্গা উপজেলার বিশ্বরোড এলাকায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে অনার্স পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ঢাকা কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত কয়েক বন্ধু মিলে উপজেলার কাউলিবেড়া গ্রামে পিকনিকের আয়োজন করেন। সারারাত বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে ভোরে মোটরসাইকেলযোগে ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন তিন বন্ধু।
ভাঙ্গা গোলচত্বরের কাছে মোটরসাইকেলটি পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা রনি ফকির (২০) ও শাকিল খান (২২) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন অপর বন্ধু অপু (২০)। অপুকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ওসি ওমর ফারুক বলেন, নিহত রনি ফকির ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী আবু তালেব ফকিরের ছেলে ও শাকিল করাত কল ব্যবসায়ী শফিকুলের সন্তান। তাদের বাড়ি ভাঙ্গা পৌর সদরে। প্রাইভেটকার ও চালক জাকির আহম্মেদকে আটক করা হয়েছে।
বি কে সিকদার সজল/এএম