নির্বাচনে আসামিদের পক্ষে কাজ না করায় বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ উঠেছে

বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ শরীফ। দুই ছেলেসহ অনুসারীদের নিয়ে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর প্রকাশ্যে ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপনের দুই পা কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। এ ঘটনায় মামলা হলে কারাভোগ ছাড়াই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান ইউসুফ শরীফ ও তার দুই ছেলেসহ অন্য অভিযুক্তরা।

এবার তাদের বিরুদ্ধে তিনটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই তিনটি ঘর ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি আহত ওই যুবককে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। ইউসুফ শরীফের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেওয়ায় সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে অগ্নিসংযোগ এবং রাতে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের।

আহত ওই যুবকের নাম মো. রফিক (২৪)। তিনি সরিষামুড়ি ইউনিয়নের ভোড়া এলাকার সালাম বিশ্বাসের ছেলে। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিক সপ্তাহ খানেক আগে তার নবজাতককে দেখতে বাড়িতে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সরিষামুড়ি ইউনিয়নের ভোড়া এলাকায় ইউপি সদস্য প্রার্থী ফোরকান সিকদারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত কর্মীসভা থেকে ফিরছিলেন রফিক। ওই কর্মীসভা থেকে ফেরার পথে ইউসুফ শরীফের বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই কয়েকজন ব্যক্তি রফিককে কুপিয়ে জখম করে।

বর্তমানে রফিক বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন

ওই কর্মীসভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ইউসুফ শরীফের ছেলে আজিম, স্থানীয় জয়নাল মেম্বারের ছেলে সোহেল, টিটু মেম্বারসহ বেশ কয়েকজন ওই বাড়ির সামনে অবস্থান করছিল। ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তারা রফিককে ডেকে পার্শ্ববর্তী একটি ঘেরের ভেতরে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যায়। 

এ সময় ইউসুফ শরীফের নিরাপত্তায় মোতায়েন বেতাগী থানা ও চান্দখালি পুলিশ ফাঁড়ির পাঁচ পুলিশ সদস্য ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। চিৎকার শুনে ওই পুলিশ সদস্যরা রফিককে উদ্ধার করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, আহত রফিকের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ভোড়া এলাকার জামাল বিশ্বাস, জয়নাল ও ফয়সাল বিশ্বাস বলেন, আহত রফিক সম্পর্কে আমাদের চাচাতো ভাই। সে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। নবজাতক সন্তানকে দেখতে সপ্তাহ খানেক আগে বাড়িতে আসছে। বাড়িতে আসার পর পরই ইউসুফ শরীফের ছেলেরা নির্বাচনে তাদের পক্ষে হয়ে কাজ করতে বলে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় ইউসুফ ও তার ছেলেরা ক্ষুব্ধ ছিল। এ কারণে সকালে তাদের তিনটি ঘরে আগুন দেয় তারা এবং রাতে রফিককে কুপিয়ে জখম করে।

ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইমাম হোসেন শিপন বলেন, পুলিশি নিরাপত্তায় আমার কর্মী ও সমর্থককে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে তিনটি ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। ইউসুফ শরীফ ও তার ছেলেরা চার মাস আগে আমাকে কুপিয়ে জখম করে। 

পঙ্গুপ্রায় অবস্থায় আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। জামিন পেয়ে ইউসুফ শরীফ, তার ছেলেসহ সহযোগীদের নিয়ে এলাকায় ফিরেই একের পর এক তাণ্ডব চালাচ্ছে। বেতাগী থানা পুলিশের সামনেই আমার ওপর হামলা হয়েছিল। আর এখন পুলিশ পাহারায় আমার সমর্থককে কোপানো হয়েছে। ইউসুফ ও তার ছেলেদের জামিন বাতিল বা গ্রেফতার না করলে তারা একের পর এক তাণ্ডব চালাতেই থাকবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ শরীফের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তার ছেলে আজীমের নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।  

বেতাগী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় রফিক নামে একজনকে উদ্ধার করে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার প্রসঙ্গে ওসি বলেন, পুলিশ ওই এলাকায় টহলরত থাকলেও ঘটনাস্থল থেকে দূরে ছিল।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এসপি