কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে ২২ কিশোরকে আটক করে পুলিশ, পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়

চাঁদপুরে বেড়েই চলছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। একের পর এক ঘটছে মারামারি, হামলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা। অধিকাংশ ঘটনার পেছনে রয়েছে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, পূর্বশত্রুতা ও কিশোরদের আধিপত্য বিস্তার। ইতোমধ্যে হাইমচর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় মোবারক গাজী (২০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। 

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের মারামারি ও হামলার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ১ মার্চ বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল-আমিন স্কুলের পেছনে দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় আব্দুর রহমান (১৮), মাসুদ (২০), হোসেন (১৯), আলিফ (১৮) ও রিফাত (১৮) আহত হন। হামলাকারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা তারা।

১৮ মার্চ সন্ধ্যায় শহরের মিশন রোড এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ইমরান (২০) নামের একজনকে জখম করা হয়। ওই দিন খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে ২২ কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
 
১৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের সিংহপাড়া এলাকার আফজাল খানের ভবনের পাঁচতলার ভাড়াটিয়া নজরুল ইসলামের বাসায় ঢুকে তার ছেলে নাবিল ইসলামকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। 

আহত নাবিল চাঁদপুর আলামিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। ওই দিন রাতেই নাবিলের বাবা নজরুল ইসলাম চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ দেন।

১৯ মার্চ সন্ধ্যায় হাইমচর উপজেলায় বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে মোবারক হোসেন (২০) নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় রাজু আহমেদ (২৫), মহিন (১৮), হামিদ (২০) ও মহিন (২১) গুরুতর আহত হন। এটি চাঁদপুরের আলোচিত হত্যাকাণ্ড।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৪৭ জন সদস্যকে আটক করে পুলিশ। এরপরও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।

স্কুলশিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, চাঁদপুরে যে ঘটনাগুলো আগে দেখিনি, সেসব এখন দেখছি। যার পেছনে রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে প্রত্যেক পরিবারকে ছেলেমেয়েদের প্রতি নজর রাখতে হবে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে সবাই আতঙ্কে আছে। তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে চাঁদপুর প্রেসক্লাব ঘাট থেকে অভিযান শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়। আমরা কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রোধে কাজ করে যাচ্ছি। সন্ধ্যার পর পাড়া-মহল্লার রাস্তায় কোনো শিক্ষার্থী পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা রাখি চাঁদপুরবাসীকে কিশোর গ্যাং মুক্ত শহর উপহার দিতে পারব।

শরীফুল ইসলাম/এএম