ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোখা মোকাবিলায় এই সভায় বাগেরহাটের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়।

শনিবার (১৩ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়।

সভার তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, এক হাজার ৯২০ জন সিপিপির সদস্য, ৫০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দুই লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মোখায় ক্ষয়ক্ষতি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও শরণখোলা এই চার উপজেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই উপজেলাগুলোর মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, সেনিটারি ন্যাপকিন, টর্চ লাইট ও ইলেকট্রিক করাতসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি মোখা পরবর্তী সময়ে খামারিদের সেবা দিতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

বাগেরহাট-২ (কচুয়া-সদর) আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্যোগ প্রশমন ও দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি জেলারই আলাদা আলাদা সমস্যা থাকে। বাগেরহাটে বেশকিছু এলাকায় বেরিবাঁধ নেই। কিছু বেরিবাঁধ রয়েছে যা ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব এলাকায় বেরিবাঁধ নেই, সেসব জায়গায় পর্যায়ক্রমে বেরিবাঁধ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক কর্মীসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। মোখা পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। সভায় র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক (সিইও) লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. শাহ-ই-আলম বাচ্চু, বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে সতর্ক থাকা এবং সঠিক সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোংলা সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

শেখ আবু তালেব/কেএ