নগরীর ঐতিহাসিক বাবলাবন বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্বালন

যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণ করেছে রাজশাহীবাসী। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর ঐতিহাসিক বাবলাবন বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক ও জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় পরে বিশেষ মোনাজাত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর রেলগেট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সেখানেও গণহত্যায় শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত হয়।

এ সময় রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু, প্যানেল মেয়র-২ রজব আলী, কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীর ভূবনমোহন পার্ক শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে নগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

শহীদদের স্মরণে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর কুমারপাড়া দলীয় কার্যালয় থেকে আলোর মিছিল বের করে নগর আওয়ামী লীগ। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে ভূবনমোহন পার্কে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানকার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্ব এই কর্মসূচিতে দলের নেতারা অংশ নেন।

এদিকে, শহীদদের স্মরণে সন্ধ্যায় আলাদা আলোর মিছিল হয়েছে। নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে এই মিছিল বের করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই মিছিলটিও ভূবনমোহন পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শহীদদের স্মরণ সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন নেতাকর্মীরা।

এ সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু একাডেমিতে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রচনা, চিত্রাংকন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে। দুপুরের দিকে নগরীর কয়েকটি স্থানে গণহত্যার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শন করে তথ্য ও গণযোগাযোগ দপ্তর।

এরপর রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট নগরজুড়েই প্রতীকী ব্ল্যাক আউট ছিল। এ ছাড়া দিনভর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ মার্চ গণহত্যায় শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আজ শুক্রবার স্বাধীনতার ৫০ বছর। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ভোর ৬টা ৪ মিনিটে জেলা পুলিশ লাইনসে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হবে স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

সকাল আটটায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন বিভাগীয় কমিশনার। পরে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শারীরিক কসরত ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা সভা হবে। ওই অনুষ্ঠানে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

বাদ জোহর নগরীর বিভিন্ন মসজিদ এবং সুবিধামতো সময়ে অন্য উপাসনালয়ে জাতির শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে হাসপাতাল, কারাগার, শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র, শিশুসদন, শিশুবিকাশ কেন্দ্র, শিশুমণি নিবাস, মা-মনি বিকাশকেন্দ্র সমূহে।

বিকেল সাড়ে ৩টায় রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলমাঠে নারীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। এরপর ৪টায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর