টানা দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েও বাইসাইকেলে চড়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ-খবর নেন। এমনকি সাইকেলে চড়েই নির্বাচনী কর্মকান্ডও পরিচালনা করছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক। এমন সাধারণ জীবনযাপনের কারণে স্থানীয়ভাবে ‘সাইকেল কাউন্সিলর’হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি।

ভোটাররা বলছেন, হাবিবুর রহমান ফারুক সাধারণ থাকতে চান। এলাকার মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে চান। যে কারণে তিনি বাইসাইকেল ত‌্যাগ করেননি। টানা দুইবারের কাউন্সিলর হয়েও ক্ষমতা ও অর্থবিত্তে তেমন আগ্রহ না থাকায় হাবিবুর রহমান ফারুককে আলাদা নজরেই দেখেন ভোটাররা।

পুরানপাড়া এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, এই যুগের একজন কাউন্সিলর হয়ে সাইকেল চালিয়ে ওয়ার্ডবাসীকে সেবা দেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। আজকাল কোনো কাউন্সিলর পাওয়া যাবে না যে প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল ছাড়া চলাচল করেন। সেখানে আমাদের কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরে একটি ফনিক্স সাইকেল চালিয়ে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে একজন সাদা মনের মানুষের পরিচয়। তিনি সারা বাংলাদেশের কাউন্সিলরদের কাছে শিক্ষা। তার মতো মাটির মানুষ হতে পারলে অবশ‌্যই দেশটি সোনার দেশ হয়ে উঠবে।

কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক চলমান সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রেডিও প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বাইসাইকেলে চলাচল করায় ভোটারদের মাঝে ব‌্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। যেকোনো স্থানে ফারুক সম্পকে জানতে চাইলেই ‘সাইকেল কাউন্সিলর’ বলে অভিহিত করেন এলাকাবাসী।

শামীম হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, কাউন্সিলর যে মোটরসাইকেল বা গাড়ি কিনতে পারেন না বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। তবে জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেই এই কৌশল বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের ছোট বেলা থেকেই তাকে সাইকেল চালাতে দেখে আসছি।

স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোনো কাজে দরকার হলে তাকে খুঁজতে হয় না, এমনিতেই দিনের মধ্যে দুই একবার সাইকেল চালিয়ে এলাকায় এসে ঘুরে যান। এলাকাবাসীর খোঁজ খবর নিয়ে যায়। তার সঙ্গে এলাকার মানুষের দারুন সখ‌্যতা।

টেক্সটাইল এলাকার বাসিন্দা চা দোকানি ফরিদ উদ্দিন বলেন, একজন কাউন্সিলর হয়েও তিনি প্রতিদিন আমার এই ছোট্ট চায়ের দোকানে এসে বসেন, গল্প করেন, চা পান করেন। মাঝে মাঝে এখানে বসেই অনেক মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন। আসলে তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই।

কাউন্সিলর সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে সাইকেল চালাই। আমার এই ৩নং ওয়ার্ডটি একটি বর্ধিত এলাকা। এখানে যে রাস্তা-ঘাট তাতে সাইকেল নিয়ে যেতেই বেশি সুবিধা হয়। আমি যদি একটি মোটরসাইকেলে ঘুরি তাহলে সাধারণ মানুষ ডাকলে শুনবো না, কিন্তু সাইকেল চালিয়ে গেলে তারা ডাকলেই থামিয়ে তাদের কথা শুনতে পারি। বলতে পারেন এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই এই ধীরগতির যানবাহন ব‌্যবহার করি।

তিনি বলেন, আমি যাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি তাদের প্রতি আমার ঋণ আছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে অহংকার প্রদর্শিত হয় এমন আচরণ করলেও অন‌্যায়। আমি মূলত মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে চাই। জনসাধারণের সেবা করতে হলে প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল লাগে না। মনের আগ্রহ থাকাটাই যথেষ্ট।

যদিও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা মনে করেন, হাবিুবুর রহমান ফারুক নিজেকে জনপ্রিয় করে রাখতে এবং ভোটারদের অনুকম্পা পেতে বাইসাইকেলে চলাচল করেন।

সিটি কর্পোরেশনের জনগুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার রয়েছে ১০ হাজার ৪৫২ জন। এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, রেডিও প্রতিকে সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক, টিফিন ক‌্যারিয়ার প্রতিকে ফিরোজ মল্লিক, লাটিম প্রতিকে মেহেদী হাসান, ঠেলাগাড়ি প্রতিকে মোস্তাফিজুর রহমান অনিক এবং ঘুড়ি প্রতিকে সালমা আক্তার।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এবিএস