শিমরাইলের মাদানিনগর মাদরাসার সামনে মহাসড়কে গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হরতালের সমর্থনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ১৫টি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন হরতাল-সমর্থকরা।

হেফাজতে ইসলামের ডাকা রোববার (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর পর্যন্ত এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাইনবোর্ড এলাকায় কয়েক দফায় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এ সময় উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হলে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হন।

বিকেলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এসব গাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি।

তবে শহরে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে মাঠে নামতে পারেননি হেফাজতের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রেলওয়ে ডিআইটি মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন। কিন্তু তাদের রাস্তায় বের হতে দেয়নি পুলিশ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর পশ্চিম ঢাল, শিমরাইল চৌরাস্তা, ইউটার্ন, মাদানিনগর মাদরাসা, মৌচাক, সানারপাড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

সকাল ৮টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি বশির উল্লাহ শিমরাইল পয়েন্টে বক্তব্য রাখেন। ইউটার্ন এলাকায় আন নূর তাহফিজুল কোরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে অবস্থান নেন হেফাজত কর্মীরা। পরবর্তীতে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।

র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় মো. শফিকুল ইসলাম (৬৭), শাহাদাত (৩৫) ও শাকিলসহ (৩২) কমপক্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশসহ ১৪ জন। 

একপর্যায়ে হেফাজত নেতাকর্মীরা কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদ মাধ্যমের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। সন্ধ্যায় যান চলাচল স্বাভাবিক হলে একটি বাস, একটি ট্রাক ও একটি কাভার্ডভ্যানে আবার আগুন দেওয়া হয়।

আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকায় হেফাজত ইসলামের ডাকা হরতালের সময় সাজ্জাদ হোসেন (১৬) নামের এক স্কুলছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কোচিংয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়।

আহতের বড় ভাই শাহাদত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সন্ধ্যার দিকে কোচিংয়ে যাচ্ছিল। হরতাল চলাকালে হেফজত ইসলামের ওপর পুলিশ গুলি চালালে আমার ভাই আহত হয়। তার পিঠের বাম পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে গলা দিয়ে বের হয়। তার অনেক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’

এছাড়াও সানারপাড় এলাকায় মো. শাকিল (২৬) নামে এক ফার্নিচার মিস্ত্রী সকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় হেফজাত ইসলামের ডাকা হরতাল চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার ডান পাশে গুলি লেগেছে।

আহতের বাবা আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো মিছিল-সমাবেশে যায়নি। সে সানারপাড়ে একটি ফার্নিচার দোকানে মিস্ত্রির কাজ করে। সে ক্যাশে বসা ছিল। বিজিবি গুলি চালালে ডান পায়ে গুলি লাগে। তাকে আহত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। আমার ছেলে মিটিং-মিছিলে যায়নি, তারপরেও গুলি খেল।’

ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেকে আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।’

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, শহরে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পিকেটিং থেকে নিবৃত করা হয়েছে। তারা রাস্তায় যানবাহনে আগুন দিয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে যান চলাচল ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। বর্তমানে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, হেফাজত নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। সংঘর্ষের সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে কতজন আহত হয়েছেন তা জানা নেই।

রাজু আহমেদ/সৈয়দ আমানত আলী/এএম/ওএফ