পাবনায় মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, দামে খুশি খামারিরা
ঈদের আর মাত্র এক দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে ক্রেতা সমাগমে জমে উঠেছে পাবনার কোরবানির পশুর হাট। হাটে চোখ জুড়াচ্ছে নানা আকার ও রঙের পশু। হাটে প্রচুর পরিমাণে পশু উঠেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। দেশি জাতের মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকেলে পাবনা সদরের হাজিরহাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টি অপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক ও খামারিরা নসিমন, করিমনে করে হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। ছোট, বড় ও মাঝারি সব ধরনের গরু উঠেছে হাটে। তবে এই হাটে ভারত, নেপাল ও ভুটানের গরু-মহিষের আমদানি নেই। ফলে দেশি গরুর চাহিদা ও দাম বেড়েছে। গত বছর লোকসানের পর এ বছর গরুর ভালো দাম পেয়ে খামারিরা খুশি বলে জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
পাবনার দাপুনিয়া থেকে হাটে এসেছেন আল আমিন। তিনি জানান, তার অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু এক লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সবুজ হোসাইন জানান, তিনি হাটে গরু এনে বিপাকে পড়েছেন। হাটে এতো গরু আমদানি হয়েছে যে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ও ক্রেতা সমাগম অনেক বেশি। দেশি জাতের গরুটি ৮০ হাজার টাকায় তিনি বিক্রি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পাবনার জালালপুরের রবিউল ইসলাম জানান, গত বছর দেশে কোরবানির পশু বেশি ছিল। গত বছরের অবিক্রিত গরু এবার ঈদে বিক্রি করতে এনে ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে তাদের গত বছরের লোকসান কাটিয়ে কিছুটা লাভ হবে।
পাবনার শ্রীপুর এলাকা থেকে হাটে এসেছেন হুমায়ুন আহমেদ। তিনি বলেন, সকালে চারটি গরু নিয়ে হাটে আসছি। বিকেল পর্যন্ত একটি বিক্রি করেছি। ছোট গরুর দাম বেশি হলেও বড় গরুর সেভাবে দাম নেই। ক্রেতারা বড় গরুর দামই ঠিকমতো বলছেন না। গরু হয়তো বাড়িতে ফিরে নিতে হবে। গো-খাদ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে এবার খামারিদের লোকসান হতে পারে।
মহেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আলিম বলেন, কোরবানির গরু কিনতে আসছি। বড় গরুর দাম কম হলেও মাঝারি গরুর দাম বেশি। দেশি গরু কিনে বাড়ি ফিরব। তবে হাটে যে পরিমাণ দালাল তাতে গরু কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চরতারাপুরের আব্দুল গফুর নামে একজন বলেন, আমরা সাতজন মিলে কোরবানি দেবো। গরু কিনতে আসছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি, পছন্দ হলে কিনবো। দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে গরু গত বছর এক লাখ টাকায় কিনেছিলাম, এবার সে রকম সাইজের গরুর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
গরু বিক্রি করতে এসেছেন পাবনা সদরের দুবলিয়ার মানিক হোসেন। তিনি বলেন, দামতো একটু বেশি হবেই। কারণ গো খাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। একটা গরু লালন-পালন করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমার দুটি দেশি ষাঁড় গরু বিক্রি করতে আসছি। আশা করি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
হাজিরহাটের ইজারাদার রুহুল আমিন বিশ্বাস রানা বলেন, কোরবানির পশু কিনতে আসা মানুষের জন্য হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সহনীয় খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এবার সুশৃঙ্খলভাবে হাট চলছে। প্রচুর গরু আসলেও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দাম সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। খামারিরা এবার লাভবান হবেন।
পাবনা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. স্বপন কুমার সরকার বলেন, আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের একটি টিম সার্বক্ষণিক হাটে অবস্থান করছি। কোনো পশু অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছি।
এদিকে হাটের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। পাবনা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তানভির রহমান বলেন, হাটে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনো এই হাটে বিশৃঙ্খলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে কোনো সমস্যা দ্রুত নিরসন করা হচ্ছে। কোনো ব্যবসায়ী ও অথবা ক্রেতার কাছে জাল টাকা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, প্রতিটি হাটে পশু অফিস থেকে ভেটেরিনারি মেডেকেল টিম পাঠানো হয়েছে। জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন বসানো আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারী ও ক্রেতারা আসছেন পাবনার হাটগুলোতে। বিক্রি বেশ ভালো। মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। এবার পাবনা জেলাতে অসুস্থ পশু নেই বললেই চলে।
তিনি জানান, পাবন জেলায় এ বছরে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে প্রায় দুই লাখ, ছাগল ৪ লাখ, মহিষ ১০ হাজার ও ভেড়া ৫০ হাজার। জেলায় এই বছরে তিন লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে তিন লাখ পশু সারাদেশে সরবরাহ করা হবে।
রাকিব হাসনাত/আরএআর