সিলভারের আলোয় হাসছে কোটখালী
সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা
সিলভারের হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা সামগ্রী এখন তৈরি হচ্ছে পটুয়াখালীর গলাচিপায়। জেলায় সিলভার সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যস্ত সময় পার করছে এ পেশায় জড়িত শ্রমিকরা। সরকারি সহযোগিতা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গলাচিপা উপজেলার কোটখালী বাজার এলাকার আজম সিলভার ফ্যাক্টরির প্রধান মেশিনম্যান মো. জহির মিয়া বলেন, মেশিন চালু করার পর সিলভারের আকার অনুযায়ী ডাই, সার্কেল লাগানো হয়। আকৃতি ঠিক করে ফিনিশিং করা হয়। পরে মোটা রড বগলে চেপে কখনো সোজা করে আবার কখনো শরীর বাঁকা করে সজোরে ঠেলা দিয়ে তৈরি করা হয় সিলভারের হাঁড়ি পাতিল।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল তৈরির প্রধান কাঁচামাল সিড ঢাকা থেকে আনা হয়। পরে আকার অনুসারে কেটে নানা সামগ্রী তৈরি করা হয়। প্রতিটি বড় পাতিল তৈরিতে ৩ মিনিট, মাঝারি সাইজের ২ মিনিট এবং ছোট সাইজের পাতিলে ১ মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়া কড়াই তৈরিতে ১ মিনিট, ঢাকনা তৈরিতে ৫ মিনিট, কলস তৈরিতে ৫ মিনিট সময় লাগে।
একই কারখানার শ্রমিক মো. ইলিয়াস বলেন, আমাদের কারখানায় তৈরি করা সিলভারের নানা সামগ্রী জেলার গলাচিপা, দশমিনা, বাউফলে বিক্রি হয়। এ সকল এলাকায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমরা গ্রাহকের চাহিদা মতো বেশি মালামাল দিতে পারি না। উৎপাদন কম হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমরা এ কারখানায় মাসিক বেতনে চাকরি করছি। তিনটি মেশিনে ৬ জন কাজ করি। মেশিন বাড়লে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
একই কারখানার শ্রমিক মো. আবদুল্লাহ বলেন, সিলভারের হাঁড়িপাতিল তৈরির পর দাগ তোলার জন্য অ্যাসিডের পানিতে তা ধুতে হয়। পানিতে ধোঁয়ার কারণে মালামাল থেকে দাগ চলে যায়। পরে তা রোদে শুকানো হয়। এরপর পাইকারদের মাধ্যমে তা খুচরা বিক্রেতার কাছে চলে যায়। খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে যায় আমাদের এ পণ্য।
শহরের সাত ভাই সৌদিয়া স্টোর্সের ম্যানেজার মো. রফিক মিয়া বলেন, বর্তমানে সিলভারের হাঁড়িপাতিলসহ নানা সামগ্রী আমাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ৩৭৫ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করি। সিলভার পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিভারের অনেক চাহিদা রয়েছে। প্লাস্টিকের সঙ্গে মোটামুটি পাল্লা দিয়ে চলছে এ শিল্প।
গলাচিপা এলাকার কোটখালী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. ইলিয়াস বলেন, আজম সিলভার ফ্যাক্টরি শুরুর পর থেকে নানা ঝামেলা চলছে। প্রভাবশালী, প্রশাসন, সাংবাদিকসহ আরও অনেকে এই ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে চাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, এবার আর কোনো ভুল করেনি। সকল কাগজপত্র তৈরি করে এখন কারখানা চলছে।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার সিলভার শিল্পের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে এ খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এসপি