ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব- ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবারও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে ওড়াকান্দি স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। 

বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জরুরি সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় এ কথা জানান। 

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা আগামী ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত বছরও করোনাভাইরাসের কারণে স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা হয়নি। এবারও স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা না হওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মতুয়া ভক্ত ও স্থানীয়দের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে তিন দিনব্যাপী স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ স্নানোৎসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মধ্যপ্রাচ্য এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে। হিন্দু ধর্মের মতুয়া সম্প্রদায়ের এ মিলনমেলায় লাখো ভক্তের আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে গোটা ঠাকুরবাড়ি। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম তীর্থস্থান। গত ২৭ মার্চ এই তীর্থভূমি ঘুরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বারুণী মেলায় বাতাসা বিক্রেতা অনুপ ঘোষ বলেন, সারাবছর মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি, মেলায় অনেক লোকের সমাগম হবে। মেলায় অনেক টাকার বাতাসা বিক্রি হবে। করোনায় মেলা হচ্ছে না জেনে খুব খারাপ লাগছে।

রামদিয়া বাজারের মিষ্টির দোকানি উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, বারুণী মেলা উপলক্ষে মিষ্টি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত চিনি, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে রেখেছি। করোনায় মেলা না হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়লাম। 

হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, কখনও আমরা ওড়াকান্দি বারুণী মেলা বন্ধ থাকতে দেখিনি। প্রতি বছর নির্ধারিত তারিখে মেলা হয়ে আসছে। মেলায় বেচাকেনার  জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা সারাবছর মুখিয়ে থাকি। কিন্তু এবার করোনায় মেলা না হওয়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হবে।

ওড়াকান্দিতে বারুণী মেলার আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্ষিরোদ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন,  স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা না হওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুব্রত ঠাকুর হিল্টু বলেন, যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আমরা ভীষণ শঙ্কিত। স্নানোৎসবে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ভক্ত এই ঠাকুরবাড়িতে আসেন। তবে মেলা ও অন্যান্য সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে সীমিত পরিসরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতি ‘স্নান’ করার অনুমতি দেয়ার দাবি জানান তিনি। 

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে- করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগম, সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে ওড়াকান্দি স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

আরএআর