বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা

বাগেরহাটে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ শতাধিক রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো দুই শতাধিক রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে জেলার অনেক পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। দূষিত পানি পানের ফলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবীর।

এদিকে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, একটি স্যালাইন ও দুইটি ট্যাবলেট ছাড়া রোগীর সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সব ওষুধ তাদের কিনতে হচ্ছে। স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের যেন ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে না হয়। 

সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মেহেদী হাসানের চাচা সাইফুজ্জামান জানান, প্রথমে বমি, তারপরে পাতলা পায়খানা শুরু হলে মেহেদীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তিন দিন হলো হাসপাতালে রয়েছি। এখানে একটি স্যালাইন ও দুইটি ট্যাবলেট ছাড়া সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু

তিনি আরও বলেন, প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ কিনেছি। এখানের পরিবেশও তেমন ভালো না। আমাদের মত গরিব রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

কচুয়ার গজালিয়া থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত রেহেনাকে গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একটি স্যালাইন হাসপাতাল থেকে তার শরীরে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এখন মোটামুটি সুস্থ।

‘আমরা গরীব মানুষ। অনেক কষ্ট করে স্যালাইন কিনেছি। কী করব, জীবন তো বাঁচাতে হবে?’ বলেন রোগীর বোন সেলিনা বেগম।

শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ডায়রিয়া রোগী সুজন শেখ বলেন, আমাদের এদিকে পানির খুব কষ্ট। দূষিত পানি পান করে দুই দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার মতো অনেকেই দূষিত পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, শরণখোলা এমনিতেই লবণাক্ত এলাকা। এর মধ্যে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পুকুরগুলোর পানি তলানিতে নেমে যায়। যে কারণে বাধ্য হয়ে মানুষ ওই দূষিত পানি পান করে। সুপেয় পানির অভাবে এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মিরাজুল করিম বলেন, সুপেয় পানির ঘাটতির ফলে বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করাতে প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমাদের হাসপাতালের চারটি বেডের অনুকূলে প্রতিদিন বিশ থেকে পঁচিশজন রোগী ভর্তি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রোগীর চাপের কারণে স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরাও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এক সপ্তাহে দুই শতাধিক রোগীদের সেবা দিয়েছি। এখনো অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, উপকূলীয় জেলার অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত। অনাবৃষ্টিতে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৬ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। 

তানজীম আহমেদ/এমএসআর