ড্রোন বানিয়ে চমকে দিলেন সুমন
নেই কোনো কারিগরি জ্ঞান। তবু বানিয়েছেন অত্যাধুনিক ড্রোন। শুধু তা-ই নয়, প্রতি মাসে ইউটিউব থেকে তার আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি। বিস্ময়কর এই যুবকের নাম সুমন (২২)। শেরপুর সদর উপজেলার ৩ নম্বর বাজিতখিলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুমরী গ্রামের মো. দুলাল মিয়া ও সমতা বানুর ছেলে সুমন।
অনন্য এই প্রতিভা সম্পর্কে জানতে সুমনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছি। আমার বাবা দুলাল মিয়া রিকশাচালক। তিনি সারা দিন কষ্ট করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনোরকম আমাদের সংসার চলত। তখন থেকেই আমি চিন্তা করতাম কীভাবে টাকা আয় করা যায়।
বিজ্ঞাপন
কোনো কারিগরি জ্ঞান অথবা প্রশিক্ষণ ছাড়া কীভাবে শুরু করলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার জন্য শেরপুর জেলা শহরের ডা. সেকান্দর আলী কলেজে ভর্তি হই, দেখি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা উন্মুক্ত ছিল। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমি ইউটিউবে বিভিন্ন কিছু বানানো দেখতাম। একসময় আগ্রহ হলো যে আমিও নতুন কিছু বানাব। ইউটিউবে আপলোড দেব। তা থেকে টাকা আসবে। এ রকম ভাবনা থেকে হঠাৎ একদিন সাহস করে ম্যাচ (দেশলাই) দিয়ে এয়ারক্রাফটার বানাই।
বিজ্ঞাপন
পরে ইউটিউব চ্যানেল খুলে এটি আপলোড দিই। সেই ভিডিওটি ব্যাপক সাড়া পায় এবং ৯ কোটিরও বেশি ভিউ হয়। এভাবেই আমার পথচলা শুরু। গত তিন মাস পরিশ্রম করে এই ড্রোনটি বানিয়েছি। এটি ওপরে তিন হাজার ফুট এবং পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্লাই করতে পারে। এটি রিমোটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাশাপাশি এটাতে একটি ফোরকে ক্যামেরা সংযুক্ত, যেটি দিয়ে দূরের ছবি ও ভিডিও একদম ফুল এইচডি দেখা যায়। আমার ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘ক্রেজি থিংক’।
কেমন সাড়া পাচ্ছেন এবং আয় করছেন, এই প্রশ্নে সুমন বলেন, বর্তমানে আমার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৬ লাখের কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত ২৫০টির কাছাকাছি কন্টেন্ট আছে। যেটা থেকে ঘরে বসে আমার মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এ জন্য প্রতি মাসে আমাকে অন্তত তিন-চারটি ভিডিও আপলোড করতে হয়। আমি এখন শেরপুর সরকারি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমি একজন সেরা ইউটিউবার হব, বললেন স্বপ্নবালক সুমন।
সুমনের বাবা রিকশাচালক দুলাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা, আমরা মূর্খ মানুষ। এত কিছু বুঝি না। আমার ছেলে বিনা প্রশিক্ষণে কত কিছু যে বানায়, তা দেখতে কত শত লোক প্রতিদিন বাড়িতে ভিড় জমায়। শুধু তা-ই না, তার কাজে আশপাশের আরও কয়েকজন যুবক সহযোগিতা করে, সুমন তাদেরও টাকা দেয়।
স্থানীয় সাংবাদিক ফজলুল করিম লিচু বলেন, সুমন আমাদের গ্রামের তথা পুরো শেরপুর জেলার গর্ব। আমি মনে করি যেসব শিক্ষিত যুবক চাকরির পেছনে দৌড়ান, তারা সুমনকে অনুসরণ করতে পারেন। কারণ, একসময় এই সুমনই অনেক যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে।
এনএ