নওগাঁর পত্নীতলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলমের নির্যাতনে হামিদুর রহমান (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৮ এপ্রিল) ভোররাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে হামিদুর রহমানের মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় দুপুরে নিহতের স্বজনরা ওসি শামছুল আলমের বিচার দাবিতে মরদেহ নিয়ে পত্নীতলা থানা চত্বরে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। 

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার বোরাম গ্রামের হামিদুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ফাহিমার পারিবারিক কলহ দেখা দিলে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন। এ ঘটনার প্রায় ১০ দিন আগে হামিদুরের স্ত্রী ফাহিমা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পত্নীতলা থানা পুলিশ গত ২৫ এপ্রিল হামিদুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। থানায় সালিস বৈঠকে হামিদুর তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় ওসি শামসুল আলম ক্ষিপ্ত হয়ে হামিদুরকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে হামিদুরের মাথা দেয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় হামিদুরের সঙ্গে থাকা খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও প্রতিবেশী নইমুদ্দিন আহত অবস্থায় তাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) হামিদুরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে বুধবার ভোররাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে ওসির বিচার দাবিতে দুপুরে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স যোগে হামিদুরের মরদেহ পত্নীতলা থানায় নিয়ে আসেন। 

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা  ডা. এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, একজন সাধারণ রোগী হিসেবে হামিদুরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান তিনি।

নিহত হামিদুরের মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ওসি বুকে লাথি ও কিল-ঘুষি মেরেছে। দেয়ালের সঙ্গে তার মাথা জোরে আঘাত দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

হামিদুরের খালাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ওসির মারধরে দুইবার হামিদুরের মাথা ইটের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। একপর্যায়ে মারধরের ভয়ে সে বউকে নেওয়ার জন্য রাজি হলেও ওসি তাকে ছাড়েননি। হামিদুরের মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য। কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

পত্নীতলা থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত ওসি শামসুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। 

শামীনূর রহমান/আরএআর