‘বেটার পাও পইড়াও একটা কম্বল পাইনি!’
অসহায় ফুলবানু
‘একটা কম্বলের লাইগে বেটার পাও (পায়ে) গিয়া পইড়া গেছি, তবু আমারে একটা কম্বল দেয়নি। আমি চাইট্টা নাতির শরীলেও এই কাপড়টা লইয়া ঘুইড়া ঘুইড়া রাখি।’
কথাগুলো বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী ফুলবানু বেগম। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুরের বাসিন্দা তিনি। স্বামী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন কেউ নেই তার। সমতা বানু নামের একজনকে বোন বানিয়েছেন। সেই বোনে সঙ্গেই থাকেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
শীতের তীব্রতায় কষ্ট করছেন তিনি। সঙ্গে নাতিরাও রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় শীতের কাপড়ও নেই। পরিবারের একমাত্র আয়-উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বোনের ছেলে মো. হজরত আলী। তার সামান্য আয়ে পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ হয় না।
শীতের কষ্ট করলেও কেউ দেখে না, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে গেলেও কোনো সহযোগিতা মেলে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই যে কত কিছু আইয়ে, মাল আইয়ে, আমার লাগি কিচ্ছু নাই।
বিজ্ঞাপন
শীতের তীব্রতায় কষ্ট করছেন তিনি। সঙ্গে নাতিরাও রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় শীতের কাপড়ও নেই। পরিবারের একমাত্র আয়-উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বোনের ছেলে মো. হজরত আলী। তার সামান্য আয়ে পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ হয় না।
এ জন্য স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে শীতবস্ত্রের জন্য গেলেও সুফল মেলেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, লালপুরের চেয়ারম্যানের দারো (কাছে) আইছি, এও দেয়নি কিচ্ছু। হেই চেয়ারম্যানের কাছে গেছি, হেও দেয় না কিচ্ছু। এই পার্টির দারো (কাছে) গেলে কয় আমি নাকি বিএনপিরে দেলাই ভোট, হেই পার্টির কাছে গেলে কয় আওয়ামী লীগকে দেলাই ভোট।
’আমি ত আওয়ামী লীগকেই ভোট দিতাম। যে বেটি নাকি আমরার লাগি খাটছে, তার লাগিও ত আমরা খাটতা ‘ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৬০ বছর বয়সী ফুলবানু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলবানু লালপুর গ্রামের বাসিন্দা হজরত আলীর বাড়িতে থাকেন। হজরত আলীর মা সমতা বানুকে বোন বানিয়েছেন ফুলবানু। নিজের কোনো পরিবার না থাকলেও হজরত আলীর পরিবারই তার পরিবার।
হজরত আলী একজন দিনমজুর। অন্যের জমিতে কাজ করে পরিবার চলে তার। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। সঙ্গে তার বোনও বয়েছেন। বোনের স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। সেই বোনের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ জন সদস্য দিনমজুর আলীর পরিবারে।
ফুলবানু নামে এক নারীকে আমি ভালো করে চিনি। খুবই গরিব, অসহায়। ফুলবানু আওয়ামী লীগ করেন, এ জন্য শীতবস্ত্র দেননি? এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজে বিএনপি করি। তবে কাউকে কোনো দিন দলীয় পরিচয়ে বিচার করিনি। এছাড়া ফুলবানু নামের ওই নারী আমার কাছে কোনো দিন আসেননি।
মো. আলহাজ, চেয়ারম্যান, গৌরারং ইউনিয়ন
এ বিষয়ে হজরত আলী বলেন, ফুলবানু দূর সম্পর্কে খালা হন। তিনি আমার মাকে নিজের বোন বানিয়েছেন। সে সূত্রেই আমাদের বাড়িতে থাকেন। আমাদের সন্তানদের নিজের নাতির মতো দেখেন। বিশেষ করে আমার বোনের ৪ সন্তানকে নিজের নাতির মতো আদর-যতœ করেন।
আপনি আছেন তবু বৃদ্ধা ফুলবানু শহরে সহযোগিতার জন্য ঘুরে বেড়ান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বারণ করি এ রকম শরীর নিয়ে শহরে সাহায্যের জন্য না যেতে। কিন্তু উনি আমাদের কথা শোনেন না। বলেন, আমার শরীরে যতক্ষণ শক্তি আছে, মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য যাব। আর আমাদের অভাবেব সংসারে সব চাহিদা পূরণও করতে পারি না।
এ ব্যাপারে গৌরারং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ ফুল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুলবানু নামে এক নারীকে আমি ভালো করে চিনি। খুবই গরিব, অসহায়। ফুলবানু আওয়ামী লীগ করেন, এ জন্য শীতবস্ত্র দেননি? এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজে বিএনপি করি। তবে কাউকে কোনো দিন দলীয় পরিচয়ে বিচার করিনি। এছাড়া ফুলবানু নামের ওই নারী আমার কাছে কোনো দিন আসেননি।
এনএ