পবিত্র মাহে রমজানে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ভাসমান ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের মাঝে সেহেরি বিতরণ করেছে নাঙ্গলকোট উপজেলার শিক্ষার্থীদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংশপ্তক’। গত রোববার রাত থেকে শুরু হয়েছে তাদের এই কার্যক্রম। এর আগে গেল বছরও পহেলা বৈশাখে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের কাজ করেছিল সংগঠনটি।

গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ২৩ মার্চ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পথচলা শুরু সংগঠনটির। তখন থেকেই স্থানীয় মানুষজনের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করে আসছে ‘সংশপ্তক’। এরপর গত বছর ১৪ এপ্রিল স্থানীয় ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

শুধু ছিন্নমূল মানুষের জন্যই নয়, তাদের এ কার্যক্রম গেল বছর চলেছিল নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্যও। ফোনকলের মাধ্যমেও গেল বছর খাবার বিতরণ করেছিল সংগঠনটি।  

সে ধারাবাহিকতা সংগঠনটি এবারও ধরে রেখেছে। গত রোববার থেকে নেমে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে সেহরি বিতরণে। নাঙ্গলকোট পৌর সদরের রেলস্টেশন, হাইস্কুল গেইট সহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে তারা সেহেরি বিতরণ করেন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দেওয়া লকডাউনের ফলে অনেকটাই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এই অসহায় মানুষ গুলো। অধিকাংশ সময়ই তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। গভীর রাতে এভাবে সংশপ্তক’র হাত থেকে সেহরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলো।

ছিন্নমূল মানুষ গুলোর একজন বলেন, ‘অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়, খাবারের খোঁজ করতে হয়! আজ টানা তিনদিন সংশপ্তক সংগঠনটি আমাদের সেহরি খাওয়াচ্ছে। তাদের জন্য অনেক দোয়া করি।’

শেষ কিছুদিনে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশে আবারও কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যার ফলে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল মানুষ পড়েছেন বিপাকে। আর তাই এমন পরিস্থিতি যতদিন চলবে, ঠিক ততদিনই খাবার বিতরণের এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায় সংগঠনটি। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেহেরি কার্যক্রম চললেও অর্থ সংকটের কারণে আগামীকাল শুক্রবার থেকে খাবার বিতরণের কার্যক্রম ইফতারের সময়ে আয়োজন করছে সংগঠনটি।

এখানেই শেষ নয়, স্থানীয় মানুষজনের মাঝে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডারও দিয়ে যাচ্ছে এবার, তাও বিনামূল্যেই। আগের বছরের মতো মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ তো চলছেই। 

সংশপ্তকের সমন্বয়ক জহিরুল ইসলামের ভাষ্য, ‘সেই করোনার প্রথম থেকেই সংশপ্তক টিম করোনা মোকাবেলায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ বিশেষ হিসেবে আমরা ছিন্নমূল মানুষের মাঝে এই সেহেরি বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি। ৩ দিন আমাদের এই কার্যক্রম চলেছে। কাল থেকে ইফতার বিতরণ কর্মসূচি চলবে আবাদের। মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে আমরা এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। ইনশাআল্লাহ যতদিন লকডাউন আছে ততদিন আমরা এই সেহেরি বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।’

জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের টিম প্রধান মাজেদুল হাসান বলেন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য আজ কয়েকদিন সেহরি সামগ্রী দিচ্ছি। সামনেরও আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবো। বরাবরই মানুষের প্রয়োজনে আমরা আছি এবং থাকবো সবসময়।

এনইউ/এমএইচ