বই হাতে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা

ইংরেজি বছরে প্রথম দিনে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭ম শ্রেণির আংশিক বই বিতরণ করা হয়। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্কুলে নতুন বই নিতে গিয়ে খালি হাতে বাড়িতে ফিরছেন।

শনিবার (২ জানুয়ারি) সরেজমিনে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন স্কুলসহ শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, আগের বছরগুলোর মতো বই উৎসব ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে আনন্দের সেই উল্লাস চোখে পড়েনি।

মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বই এখনও জেলায় পৌঁছায়নি, ফলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। সপ্তম শ্রেণি এবং নবম শ্রেণির আংশিক বই বিতরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলে। 

কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুহিন, শাকিল এবং তানিয়া বলেন, স্কুলে নতুন বই নিতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। আমাদের বই এখনও স্কুলে আসেনি। স্কুলে বই আসলে আমাদের জানানো হবে বলে বলেছেন স্যাররা।

শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বছরের বই তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকরা

কুষ্টিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা খাতুন বলেন, আমাদের সাতটা বই দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো পরে দেওয়া হবে। এখনো নাকি স্কুলের সব বই পৌঁছেনি। 

জানা গেছে, মাধ্যমিক, দাখিল, ইবতেদায়ি, এসএসসি ভোকেশনাল ও ইংরেজি ভার্সনের সব বই কুষ্টিয়ায় এখনও পৌঁছায়নি। ফলে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা খুব শিগগির বই পাবে। তবে একযোগে বই১ পাবে না বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এবার বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে স্কুল থেকে বই নিয়ে যাচ্ছে। এবার ক্লাস ও রোল অনুযায়ী নতুন বই প্যাকেটজাত করে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।

ভিন্ন ভিন্ন দিনে ক্লাস ও রোল অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে শিডিউল দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত দিনে শিডিউলভুক্ত ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহ করছে।

কুষ্টিয়া জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৪১ লাখ ৯১ হাজার ১ হাজার ৮টি বই শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরগুলোর মতো এবার বছরের প্রথম দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে সব শ্রেণির সব বই বিতরণ করা হয়নি। হয়নি বই উৎসব। 

কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান বলেন, মাধ্যমিকের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বই পর্যায়ক্রমে আসছে। আশা করছি বছর শুরুর ১২ দিনের মধ্যে  সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব।

সব বই এখনও এসে পৌঁছায়নি। সপ্তম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে আংশিক বই বিতরণ করা হচ্ছে।  জেলার ৬টি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট ২৮ লাখ ৩ হাজার ৬২৩টি বই বিতরণ করা হবে।  তার মধ্যে মাধ্যমিকে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৪, দাখিলে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৩, ইবতেদায়ি ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮০, ভোকেশনালে (এসএসসি) ২১ হাজার ৫২০ এবং ইংলিশ ভার্সন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৯ হাজার ৬টি বই বিতরণ করা হবে। 

তিনি আরো বলেন, জেলায় মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা কত তা এখনই বলা সম্ভব না। কত বই আমাদের জেলায় পৌঁছেছে সেটাও বলা সম্ভব না। তবে খুব শীঘ্রই সকল বই সকল শ্রেনীর পৌঁছে যাবে। স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষসহ তারা প্রস্তুত আছেন। কেন্দ্র থেকে বই এসে পৌঁছলেই স্কুলগুলোর মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া জেলায় প্রাথমিক স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৫ বই। যার মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এসে পৌঁছেছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ বই। শতাংশের হিসাবে ৯৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বই পৌঁছেছে।

এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯০১, কুমারখালীতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০, খোকসায় ১ লাখ ২ হাজার ২১৬, মিরপুরে ২ লাখ ৫০০, ভেড়ামারা উপজেলায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮টি বই এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০টি বই বিতরণ করা হবে। বছরের প্রথম দিন থেকে বই বিতরণ করা শুরু হয়েছে। স্কুল  এসে শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার আগের মতো ঘটা করে বই উৎসব হচ্ছে না। প্রাথমিকের অধিকাংশ বই এসে গেছে। মাধ্যমিকের সব বই আসেনি।

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খাইরুল  ইসলাম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সকল বই পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তালিকা করে তাদের মাঝে বই বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আংশিক (৭টি) বই ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্য শিক্ষার্থীদের বই এখনও আমাদের স্কুলে দেওয়া হয়নি। শিক্ষা অফিস থেকে বলা হয়েছে খুব শিগগির বই দেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের প্রথম দিন থেকে বই বিতরণ শুরু করেছি। মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শ্রেণির বই আমাদের হাতে এখনও পৌঁছায়নি। সপ্তম শ্রেণির আংশিক বই দেওয়া হয়েছিল।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আইসিটি) লুৎফুন নাহার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।

এমএসআর