বরিশালে পুলিশের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
ফাইল ছবি
বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে রেজাউল করিম (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। শনিবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত রেজাউল করিম নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছেলে।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার। তিনি বলেন, শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাতে আহত অবস্থায় রেজাউল করিমকে হাসপাতালে ভর্তি করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। এ সময় তার প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। শনিবার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়। এর বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আসামির মৃত্যুর বিষয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন তার স্বজনরা। আমরা তদন্ত করে দেখব আসলে কিভাবে কি হলো? যদি পুলিশ সদস্য দায়ী হন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, অসুস্থ অবস্থায় হাজতিকে কারাগারে আনা হয়। ফরওয়াডিং কাগজেও লেখা ছিল রেজাউল করিম অসুস্থ। তার দুই পা থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাকে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) কারা কতৃপক্ষ রিসিভ করে। পরের দিন তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় রেজাউলকে ১৩৬ গ্রাম গাজা ও ৪ অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ গ্রেফতার করেন এসআই মহিউদ্দিন মাহি। ওইদিন রাত পৌনে ১২ টায় রেজাউলকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করেন এসআই। রাতেই মামলা করা হয় এবং পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতের ফুপা তারেক মিয়া বলেন, রাত ৮টার দিকে হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি রেজাউলকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা কারণ জানতে চাইলে মহিউদ্দিন কিছু জানায়নি।
নিহতের বাবা ইউনুস মুন্সী বলেন, আটকের সময় আমি ঘটনাস্থলে গেলে মহিউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে রেজাউলকে নিয়ে যায়। তখন রেজাউল দিব্যি সুস্থ ছিল। পরে জানতে পারি রেজাউলকে গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে। এরপর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আমাকে পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়, রেজাউল বাথরুম থেকে পরে গেছে। এতে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। মৃত্যুর আগে রেজাউলের সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেয় নি পুলিশ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মহিউদ্দিন মাহি বলেন, কি কারণে ওর মৃত্যু হয়েছে আমি বলতে পারব না। ডাক্তার বলতে পারবেন কেন তার মৃত্যু হয়েছে। আমি তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন কিরিনি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন এলো কিভাবে জানতে চাইলে বলেন, তা আমি জানব কিভাবে? এরপর মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম বলেছেন, রেজাউল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে।
এসপি