ট্রাকে চড়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

করোনা সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। এতেই যত ভোগান্তি ঈদে ঘরমুখো মানুষের। কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানতে নারাজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাভারে আসা কর্মজীবীরা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ট্রাকে পলিথিন ও ত্রিপলের নিচে শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

মঙ্গলবার (১১ মে) বিকেলে নবীনগর-চন্দ্রা, ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর-ইপিজেড মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশেই ট্রাকে মানুষ বোঝাই করছেন চালকরা। কাভার্ডভ্যানেও যাত্রী তোলা হচ্ছে। চার মাসের শিশু সন্তানকেও নেওয়া হয়েছে কাভার্ডভ্যানে। মূলত বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে এসব মানুষ ট্রাকের পরিবর্তে কাভার্ডভ্যানে বন্দি যাত্রা করবেন। এছাড়া সড়কের পাশে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢাকা কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হয় মালবোঝাই ট্রাক। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা গেল পলিথিন ও ত্রিপলের নিছে মানুষবোঝাই।

কাভার্ডভ্যানে বন্দি যাত্রা করবেন মোখলেস। তিনি আশুলিয়ার একটি পোশাক করাখানায় কাজ করেন। বাড়িতে যাচ্ছেন চার মাসের শিশু আমিনাকে নিয়ে। বাস চলাচল না করায় শিশু সন্তানসহ পরিবার নিয়েই উঠেছেন কাভার্ডভ্যানে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আজ ছুটি পেয়েছি। গত দুই ঈদ আমরা সাভারেই করেছি। বাড়িতে আরও সন্তান আছে। তাদের আবদার বাড়িতে ঈদ করতে হবে। বার বার ফোন করে বাড়িতে ডাকছে। না গিয়ে উপায় নেই।

 কাভার্ডভ্যানেও উঠছেন যাত্রীরা

অপর যাত্রী আসাদুল বলেন, গাড়ি থাকলে এতো ভোগান্তি ও দুর্ভোগ হতো না। ট্রাকে করে যাচ্ছি তাতেও বগুড়ার ভাড়া এক হাজার টাকা। বাড়িতে তো যেতে হবে। আমার চাকরিও নাই। করোনার কারণে আমাকে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখানে থাকলে তো ঋণের বোঝা বাড়বে। আমি ঋণ করে এখানে থাকলে বাড়িতে পরিবার না খেয়ে থাকবে। করোনার ঝুঁকি আর অনিরাপদ যাত্রা বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। 

কাভার্ডভ্যান চালক মালেক বলেন, যাত্রীরা তো ট্রাকে করে যাচ্ছেই। তাদের তো আর কেউ ঠেকাতে পারছে না। এই বৃষ্টির মধ্যে কাভার্ডভ্যানে অন্তত তারা ট্রাকের চেয়েও ভালোভাবে যেতে পারবেন। যাত্রীর দুর্ভোগ দেখে আমরা রাজি হয়েছি। 

বেশি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের তেলের গাড়ি, তেল দিয়ে গাড়ি চলে। এজন্য ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে। তেলের খরচ বেশি।

ট্রাকচালক সাইফুল বলেন, যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। তারা পলিথিনের নিচে যেতেও প্রস্তুত। আমরা বাইপাইল থেকে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। যাত্রীরা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ যাবে। অন্যদের চেয়ে আমরা কমই নিচ্ছি। অন্যরা বগুড়ার যাত্রী তুলে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে সব ট্রাকে পলিথিন ও ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। যাতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কম হয়।

সড়কে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, এভাবে গ্রামে যাত্রায় করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। ঘরমুখো মানুষকে বুঝতে হবে। বোঝাতে হবে তাদের এমন যাত্রায় পরিবার কতোটা নিরাপদ। তারা পুরো পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলছেন।

এমন যাত্রায় যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফজর আলী।

তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি এভাবে যাত্রা অনিরাপদ। কিন্তু তারা নাছোরবান্দা। যাত্রীদের বাড়ি যাওয়া ঠেকানোর যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরএআর/