ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস
সাতক্ষীরায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস
দূর-দূরান্তে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানোর জনপ্রিয় মাধ্যম এখন কুরিয়ার সার্ভিস। চলছে আমের মৌসুম। আত্মীয়-স্বজনের কাছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পাঠাচ্ছে পরিবার-পরিজনরা। এছাড়া অনলাইনে ব্যবসায়ীদের প্রধান মাধ্যমও কুরিয়ার সার্ভিস।
সাতক্ষীরার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে আমের বুকিং ও প্যাকেট প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত সময় পারছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ভিড় সামলাতে এ কাজের জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি শ্রমিকও।
গ্রাহকের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। বুকিংয়ের জন্য নির্ধারিত টাকা ছাড়াও বাধ্যতামূলক প্রতি কার্টনের জন্য ১৫-২০ টাকার প্লাস্টিকের বস্তা কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বুকিং শেষে প্রতি কার্টনে দিতে হচ্ছে ১০-২০ টাকা বকশিশও।
বিজ্ঞাপন
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস সাতক্ষীরা স্টেশনের তথ্য অনুয়ায়ী, ঢাকায় প্রতি কেজি আম পাঠানোর জন্য ১২ টাকা, ঢাকার বাইরের জেলায় নেওয়া হচ্ছে ১৬ টাকা। এখন প্রতিদিন বুকিং হচ্ছে ২০ হাজার কেজি আম। বুকিং দেওয়ার পরদিনই আম পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে স্টেশনটি।
প্রতিদিন কত টাকার আম বুকিং হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি স্টেশন কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দেওয়া তথ্যে প্রতিদিন প্রতি কেজি ১২ টাকার হিসেবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ১৬ টাকার হিসেবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার আম বুকিং হচ্ছে স্টেশনটিতে।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার আমজেদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ১৬ মে থেকে প্রতি দিন ২০ টন আম বুকিং হচ্ছে। আগামী ৫ থেকে ৭ দিন এভাবে চলবে। তারপর কমে যাবে। টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়। আমাদের হেড অফিস থেকে বুকিংয়ের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আমরা সেটাই নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এখন অনলাইনে গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গ্রাহকরা আম কিনছেন। সেই আম পাঠাতে বুকিং করছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে। যার কারণে বুকিংয়ের চাপ বেড়েছে।
বস্তা নেওয়া বাধ্যতামূলক, সেই বস্তার মূল্য ৫০ টাকা আবার শেষে বকশিশ কেন? এ প্রশ্নে স্টেশন ম্যানেজার আমজেদ হোসেন বলেন, প্রচুর গ্রাহকের চাপ থাকায় স্টাফদের বাইরে চারজন কাজ করছেন। তারা বস্তাগুলো সেলাই করে দেয়। সেজন্য তারা এই টাকা নিচ্ছেন।
অনলাইনে ব্যবসা করেন শহরের আব্দুর রহমান। সাতক্ষীরা শপ অনলাইন পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় এসএ পরিবহন, জননী, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ও ইউএসবি এই চারটি কুরিয়ার সার্ভিসে আম বুকিং নিচ্ছে। প্রতি কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে জননী ১০ টাকা, ইউএসবি ১০ টাকা নিচ্ছে। সেখানে এত ভোগান্তি ও হয়রানি নেই।
তিনি আরও বলেন, তবে অনলাইনে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকেছেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস প্রতি কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে ১২ টাকা করে নিচ্ছে। সব থেকে বেশি বুকিং হচ্ছে এখানে। আবার ভোগান্তি হয়রানিও বেশি।
আব্দুর রহমান বলেন, সুন্দরবন কুরিয়ারে আম বুকিং দিতে সময় লাগছে ২-৩ ঘণ্টা। প্রতি কার্টন আম পাঠাতে গেলে প্রতি কেজি আমের নির্ধারিত মূল্য ছাড়া প্রতি কার্টনের জন্য একটি বস্তা নিতে হবে বাধ্যতামূলক। যার মূল্য ৫০ টাকা। এই বস্তার বাজার মূল্য ১৫-২০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আবার প্রতি বস্তায় প্রাপকের নাম লিখে দেওয়ার জন্য বকশিশ দিতে হবে ১০-২০ টাকা। সে হিসেবে দেখা যায়, একজন গ্রাহকের এক প্যাকেট আম পাঠাতে নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও ৬০-৭০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। জননী, ইউএসবিতে এমন ফাঁদে ফেলে টাকা নিচ্ছে না।
তালা সদরের শিবপুর গ্রাম থেকে আম বুকিংয়ের জন্য সুন্দরবন কুরিয়ারে যান আসাদুল ইসলাম। ভোগান্তি ও বেমি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমি দুই মণ ২০ কেজি আম পাঁচটি প্যাকেটে ঢাকা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে কুরিয়ারে পাঠিয়েছি। ১ হাজার ৩২০ টাকা বুকিং ফি দিতে হয়েছে। পাঁচটি বস্তা কিনতে হয়েছে ২৫০ টাকায়।
এসএ পরিবহন সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজার কামরুজ্জামান জানান, সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০ ক্যারেট আম বুকিং হচ্ছে। প্রতি কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে ১৫ টাকা ও বাইরের জেলার জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তানজিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা ইচ্ছামতো তাদের ফি নির্ধারণ করে সেবা দেয়, এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না। তবে কেউ যদি অভিযোগ দেয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
আকরামুল ইসলাম/এমএসআর