বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকারে পরিণত হয়েছে। চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু হচ্ছে। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হচ্ছে আকাশ। প্রিয়জনের লামরদেহ রেখে নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা। মরদেহ স্তূপে পরিণত হচ্ছে। একটি ভাইরাসের কারণে সারা জীবনের সব মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ মাটিতে ভূলণ্ঠিত হচ্ছে।

চারদিকে মৃত্যু-আতঙ্ক। নিশ্চিত আক্রান্ত হবে ভেবেও মৃত্যুকে পরোয়া না করে অনেকে মরদেহ সৎকারে এগিয়ে আসছেন। সামাজের মানবিক দিকগুলো চিন্তা করেই অনেক এমন ঝুঁকি নিচ্ছেন। গড়ছেন মানবতার দেয়াল।

তেমনই একটি সংগঠন ‘যখন কেউ পাশে থাকবে না তখনো আছি আমরা’― এমন প্রতিপাদ্য ধারণ করে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় এগিয়ে এসেছে Corona Update Kurigram - করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম। স্বাস্থ্যসচেতনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী, খাদ্যসহায়তা, চিকিৎসক হেল্প ডেস্ক সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাসহ করোনায় আক্রান্ত মরদেহ সৎকারের দায়িত্ব নিয়ে পথ চলছে তাদের। 

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মরদেহ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছে এই স্বেচ্ছাসেবক দলটি।

দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের পাশে থেকে মানবিকতার পতাকাকে সমুন্নত রাখা মানুষগুলো হলেন অন্তু চৌধুরী, সুমন সরকার, আবদুর রফিক, ইশরাক চৌধুরী, সৌরভ আহমেদ ও মুফতি আমিনুল ইসলাম বেলালী। তারা সবাই কুড়িগ্রাম পৌর শহরের বাসিন্দা।

কথা হয় সংগঠনের সদস্য স্বেচ্ছাসেবক ডা. আবদুর রফিকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুল্লি নাফসিন জাইকাতুল মাউত― এই কথাকে বিশ্বাস করি। আজ হোক কাল হোক প্রত্যেককেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাই আমরা মৃত্যুকে মেনে নিয়ে এই দুর্দিনে কাফন-দাফন করতে টিম গঠন করে নিজ পরিবারের একজন সদস্য মনে করে মরদেহের সৎকারে অংশগ্রহণ করছি। আশা রাখি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।

স্বেচ্ছাসেবক অন্তু চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আমরা মানুষের পাশে আছি এবং থাকব। যখন কেউ পাশে থাকবে না, তখন আমরাই পাশে থাকব, ইনশা আল্লাহ। আমরা আত্মপ্রচার করার জন্য নয়, নিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াই। এই মহামারি দুর্যোগে সামাজের মানুষগুলোর পাশে থাকার চিন্তা করেই আমাদের এই পথচলা।

তিনি বলেন, সবার কাছে দোয়া চাই, করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম-এর এই সহযোদ্ধা প্রিয় মানুষগুলো যেন সুস্থ থাকেন। মানুষের পাশে থেকে যেন অন্যান্য মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।

করোনা আপডেট সংগঠনের পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অন্তু বলেন, আপনারা আছেন বলেই আমরা ভরসা পাই। দৃষ্টির অন্তরালে বিভিন্ন সময়ে অর্থ, সময় শ্রম দিয়ে যেসব শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয় মানুষগুলো আমাদের পাশে ছিলেন, এখনো আছেন, তাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও চির কৃতজ্ঞতা।

মো. জুয়েল রানা/এনএ