বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত প্রথমেই পড়ে সুন্দরবনে। আইলা থেকে সর্বশেষ আম্ফান এ সাক্ষ্যই বহন করছে। সুন্দরবন সবসময় বুক উঁচিয়ে উপকূলের মানুষ এবং জনপদকে রক্ষা করে। 

বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর সুন্দরবনে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সুন্দরবনে আঘাত করার কারণে ঝড়টির গতিবেগ কমে যায়। এতে লোকালয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে সুন্দরবনের ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ উপড়ে পড়ে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় পশ্চিম বিভাগে। ঝড়ে গাছের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ৫০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তবে কোনো বন্যপ্রাণির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে ২০২০ সালের ২০ মে সুন্দরবনে ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এতে সুন্দরবনের ১২ হাজার ৩৫৮টি গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বনের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে বলা হয়, আম্ফানের আঘাতে পশ্চিম সুন্দরবনের দুটি রেঞ্জ এলাকায় ১২ হাজার ৩৩২টি গাছ ভেঙে গেছে। এসব গাছের মধ্যে গরান গাছের সংখ্যা বেশি। টাকার হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ১০ লাখ ১০ হাজার ৫৬০ টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামোর ক্ষতি হয় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

২০২১ সালের ২৬ মে সুন্দরবনে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের। তবে ঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা ছাড়া বিকল্প কিছু দেখছে না বনবিভাগ। ১৫৮৪ সাল থেকে ২০২০ সালের ২০ মে পর্যন্ত ৭৫টি বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করেছে সুন্দরবন। 

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ ধরা, কাঁকড়া ধরা বা মৌয়ালদের পাস দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে অনুমতিপত্র নিয়ে সুন্দরবনে রয়েছেন তাদের মঙ্গলবারের (২৫ মে) মধ্যে লোকালয়ে ফিরে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসীন হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রথম আঘাত পড়বে সুন্দরবনে। বন বিভাগের কর্মীদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া বনজীবীরা লোকালয়ে ফেরানোর জন্য বন বিভাগের কর্মীরা কাজ করছে। মূলত যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় আঘাত থেকে জনপদকে রক্ষা করে সুন্দরবন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

আকরামুল ইসলাম/এসপি