যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারকে পুনরায় পুনর্নিয়োগ প্রদান না করার জন্য মানববন্ধন করেছে যবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি। সোমবার (২৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মচারী সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিদীয় উপাচার্য ড. মো. আনোয়ারের মেয়াদকালে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনেকটা পেছনে চলে গেছে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃতি করেন, যা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি উচ্চশিক্ষার সিমাগো (scimago) বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিংয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে আনতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা গবেষণা ভাতা গ্রহণ করেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আপত্তি তোলে। সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে উপাচার্য ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন দিনপ্রতি ১২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে উপাচার্যের বাংলো ব্যবহার করেন এবং বাংলোর সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।

বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে উপাচার্যের বাংলো মেরামত করা হলেও ওই বাংলো নির্মাণাধীন বলে বাড়ি ভাড়া ফাঁকি দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেন। ঢাকায় উপাচার্যের পরিবারের সদস্যদের বসবাসের জন্য বাড়ি ভাড়া বাবদ নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা অমান্য করে বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি প্রদান ও এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে স্থানান্তর করেন। এ ছাড়া বিদীয় উপাচার্য বিরুদ্ধে এমন ৫৫টি অভিযোগ রয়েছে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে মানববন্ধনে বক্তরা এমনটি দাবি করেছেন।

সমাবেশে বলা হয়, বছরের অধিকংশ সময় তিনি ঢাকায় থাকতেন। তার মতো দুর্নীতিবাজ মানুষকে যবিপ্রবি পরিবার কোনোভাবেই উপাচার্য পদে আর দেখতে চায় না। তারা সদ্য বিদয়ী উপাচার্যের সব কর্মকাণ্ড তদন্ত করে আইনের মুখোমুখি করার দাবি তোলেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তোফায়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ড. আমজাদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুব্রত মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুর রউফ সরকার, সদস্য ড. ফরহাদ বুলবুল, সদস্য ড. হুমায়ুন কবির, সদস্য সুমন রহমান, বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হেলালুল ইসলাম হেলাল, সাধারণ সম্পাদক তাসরিক হাসান, কর্মচারী পরিষদের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত ইসলাম সবুজ ও ফিশারিজ বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একরামুল কবীর দ্বীপ।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের প্রথম মেয়াদের চার বছর পূর্ণ হয়েছে। তিনি বিদায় সংবর্ধনা নিয়েছেন। পদটি শূন্য হওয়ায় ২০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব নূর-ই-আলমের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে যবিপ্রবির অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে যবিপ্রবির উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওই দিন বিকেলে তিনি রুটিন উপাচার্য হিসেবে যবিপ্রবিতে যোগ দেন।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রথম মেয়াদ শেষে তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ না দিয়ে রুটিন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরোধীরা। একই সঙ্গে ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দায়িত্ব পাওয়ায় তারা খুশি। তারা বলছেন, নয়া ভিসি হিসেবে নতুন মুখই আসছেন। অন্যদিকে, আনোয়ার হোসেনপন্থীরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরছেন ড. আনোয়ার হোসেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে আসছেন নতুন ভিসি হিসেবে, সেটি দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

জাহিদ হাসান/এনএ