চাকরিজীবীদের কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বরগুনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরগুনা জেলার সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় সাতটি কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি ৪৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভায় জেলার সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বরগুনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলী উপজেলায় ১১১টি, তালতলী উপজেলার ৫৩টি, পাথরঘাটা উপজেলা ১২৪টি, বেতাগী উপজেলায় ১১৪টি এবং বামনা উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট রক্ষণাবেক্ষণ, শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে গভীর নলকূপ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নৌযান ও মোটরযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডাক্তার মারিয়া হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে হতাহত মানুষের চিকিৎসার জন্য জেলার সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৪৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার অভিযানের জন্য জেলায় ১২ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে সিপিপির ১ হাজার ১৬০ জন, রেড ক্রিসেন্টের ২০০ জন, উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারী ২৫০ জন, ব্র্যাকের ২০০ জন এবং রোভার স্কাউটসের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। ইতোমধ্যেই এসব স্বেচ্ছাসেবীর অধিকাংশ নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রচারণার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী সহায়তার জন্য ইতোমধ্যেই জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী এ টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়াও আমাদের কাছে এই মুহূর্তে ৩৫৭ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ৬ লাখ টাকার গোখাদ্য মজুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ইয়াস মোকাবিলায় আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সরকারি-বেসরকারি সব চাকরিজীবীকে কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৪৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলার ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত নগদ অর্থসহ খাদ্যদ্রব্য মজুত আছে। খুব অল্প ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমেই বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএসআর