খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান ও দায়িত্ব গ্রহণ করেছে অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিক যোগদান করেন।

নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি তার বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা ও ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তার এই নিয়োগ লাভে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। বিশ্ববিদ্যালয়টি মানবসম্পদ সৃষ্টিতে দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা রেখে চলেছে।

গত ৩০ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্জন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে দেশের মধ্যে একমাত্র ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, শতভাগ একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে চলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় একটি অবস্থান তৈরি। এই কৃতিত্বের দাবিদার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, খুলনাবাসী ও শুভানুধ্যায়ী।

তিনি বলেন, বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চ্যালেঞ্জ এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ করে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা, গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে পরিচালিত করা।

আমরা জানি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা কী এবং কোথায়। একই সঙ্গে আমরা এটাও জানি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে আমরা সবাই বদ্ধপরিকর। তাই সব মতের উর্ধ্বে এসে সবাই মিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই।

আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, খুলনার জনপ্রতিনিধিরা, রাজনৈতিক নেতারা, সিভিল সোসাইটি, সাংবাদিক, প্রশাসন ও আপামর জনসাধারণ; যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান ও গবেষণায় উদ্ভাসিত শিক্ষায় যেন আমরা উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলরকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা করেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। যোগদান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও সূচনা বক্তৃতা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টরা, পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল কালজয়ী মুজিব, শহিদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অদম্য বাংলা, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিবের ম্যুরাল ও কটকা স্মৃতিস্তম্ভ এবং গল্লামারী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

এ সময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানরা এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রো ভিসি, ট্রেজারার এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)। এরপর বিভিন্ন স্কুল, ডিসিপ্লিন, আবাসিক হল, শিক্ষক সমিতি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকবৃন্দ, ফরেস্ট্রি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন বিভাগ ও দফতর, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এর আগে তিনি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনে যান। তিনি এই ডিসিপ্লিনেরই শিক্ষক। সেখানে ডিসিপ্লিন প্রধানসহ শিক্ষকরা তাকে স্বাগত জানান। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।

মোহাম্মদ মিলন/এনএ