রাজশাহীজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মহামারি করোনা সংক্রমণ। শনিবার (০৫ জুন) নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৮৬ জনের। সংক্রমণের হার ৫১ শতাংশ। সংক্রমণ নামছে ইনা তিন অংকের নিচে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা।

সংক্রমণ ঠেকাতে করোনার নয়া হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে বিশেষ লকডাউন। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় পাশের নওগাঁর চলছে জোনভিত্তিক লকডাউন।

কিন্তু আম বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে সেই পথে হাটেনি রাজশাহীর জেলা প্রশাসন। বিকল্প হিসেবে সন্ধ্যার পর জনসাধারণকে ঘরে রাখতে ৩ জুন আরোপ করা হয়েছে বিশেষ কড়াকড়ি।

ঘোষণা অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাজশাহী নগর ও জেলার সকল ধরনের দোকানপাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। কিন্তু খোলা থাকবে ওষুধ, জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, চিকিৎসা সেবা এবং মৃতদেহ দাফন ও সৎকারে জড়িত প্রতিষ্ঠান।

সন্ধ্যা ৭টার পর জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে নাগরিকদের।

সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব বিনোদনকেন্দ্র। তবে এই আদেশের বাইরে থাকছে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য পরিবহন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। এর বাইরে প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আলাদা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।

দিনভর দাফতরিক নানান কাজে ব্যস্ত থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই দেখভালে নেমে পড়ছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরীকে নিয়ে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন এলাকা।

জেলা প্রশাসকের দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ কড়াকড়ি আরোপের দিন ৩ জুন রাজশাহীজুড়ে এমন ৬৩ জনকে পেয়েছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত, যারা বিধিনিষেধ অমান্য করেছিলেন।

পরে ৬৩ মামলায় তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৩০ টাকা জরিমানা। একই দিনে রাস্তায় নেমে ৮৩০ জনের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪ জুন ৩২ জনকে ২২ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৫ জুন ১৬ জনকে ১১ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিধিনিষেধ আরোপের আগের দুই দিনে ৬৬ জনকে জরিমানা আদায় হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯০০ টাকা। এই দুই দিনে এক হাজার ২৪০টি মাস্ক বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি করোনা দুর্গদের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার পর যাতে কেউ ঘরের বাইরে না থাকেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। জরুরি নয় এমন দোকানপাঠ খোলা থাকলেই জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর