সিজারের ৮ মাস পর পেট থেকে বের করা হলো গজ
রাজবাড়ীর পাংশায় সিজারের ৮ মাস পর তাসলিমা (৩৪) নামে এক নারীর পেট থেকে গজ (ব্যান্ডেজ) বের করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় গজটি পেটে থাকায় তাতে পচন ধরেছে। এতে তার শরীরে আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ জুলাই উপজেলার মর্ডান ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাসলিমার সিজার করানো হয়। তার সিজার করান হাসপাতালের খণ্ডকালীন চিকিৎসক এবং পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শর্মী আহমেদ। গত বছরের ৯ জুলাই তাকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
তাসলিমার স্বামী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের (৪ জুলাই) দুপুরে তাসলিমাকে মর্ডান ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তির পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে জরুরি সিজার করতে পরামর্শ দেন। ডাক্তারের কথা শুনে আমরা সিজারে রাজি হলে ডা. শর্মী আহমেদ ও তার সহযোগী ডা. বিনা আক্তার, নার্স এবং ওটি বয় মিলে আমার স্ত্রীর সিজার করেন। সিজারে ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।
তিনি আরও বলেন, সিজারের দুদিন পর থেকে তাসলিমার পেটে ব্যথা শুরু হতে থাকে। এ সময় হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর অস্ত্রোপচারের ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে। পরে ব্যথা আরও বেড়ে রায়। তাকে কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন।
বিজ্ঞাপন
এক পর্যায়ে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন দেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, পেটের মধ্যে গজ ব্যান্ডেজ রয়েছে। এ বছরের ১ মার্চ অপারেশন করে তাসলিমার পেট থেকে বের করা হয় গজ ব্যান্ডেজ। ৩০ মার্চ পাংশা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি বলেন, আমি একজন সামান্য এনজিও কর্মী। অপারেশনের পর থেকে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে আমার। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শর্মী আহমেদে বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমারও ভুল হয়েছে। আমি ভুল স্বীকার করেছি এবং রোগীর পরিবারকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসানাত আল মতিন বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং দুই পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করা হয়েছিল। মর্ডান ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রাজ্জাক ১ লাখ টাকা এবং ডা. শর্মী আহমেদ ১ লাখ টাকা দিবেন। কিন্তু ক্লিনিক মালিক পক্ষ টাকা না দিয়ে ক্লিনিকটি অন্য কোথাও বিক্রি করে দেন। ক্লিনিক মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও যে হাসপাতালে এমন ভুলের ঘটনা ঘটেছে তা উল্লেখ করে স্বজনরা লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
মীর সামসুজ্জামান/এসপি