চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ঘোষিত ১৪ দিনের বিশেষ লকডাউন শেষে জনজীবন অনেকেটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মঙ্গলবার (৮ জুন) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে দোকানপাট-শপিংমল ও চালু হয়েছে গণপরিবহন।

জেলার হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ লকডাউন শিথিল করায় আবারও মানুষের আনাগোনা বেড়েছে শহর ও রাস্তার মোড়ে। তবে ১৪ দিনের বিশেষ লকডাউন শেষ হলেও জারি রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। এসব বিধিনিষেধ কার্যকরে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দিলেও জেলা শহরের নিউমার্কেট, ক্লাব সুপার মার্কেটে দেখা গেছে গাদাগাদি করে ভিড় করছেন ক্রেতারা। মোটরসাইকেলে একাই যেতে দেওয়ার অনুমতি দিলেও বুধবার (৯ জুন) জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে অনেকেই ২ জন করে যাচ্ছেন।

রিকশায় ১ জন ও অটোরিকশায় ২ জন করে যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়ে ছাড় দিলেও সিংহভাগ গাড়িতেই আসন বরাবর যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে, জেলার অভ্যন্তরে নবাবগঞ্জ-রহনপুর ও নবাবগঞ্জ-নাচোল-আড্ডা রুটের বাসগুলো অর্ধেক সিট নিয়ে চলাচল করছে।

২৫ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত জেলাব্যাপী বিশেষ লকডাউনের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ কাজ করেছে। তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে লকডাউন শেষে কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন মঙ্গলবার মানুষের তেমন আনাগোনা না থাকলেও বুধবার দোকানপাট ও মার্কেটে অধিক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পথচারীদের অনেকের মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছেন। 

জেলা শহরের নিউমার্কেটের গার্মেন্টস দোকানকার ইয়াসির আলী বলেন, ১৪ দিন পর গত মঙ্গলবার মার্কেট খুলতে পেয়েছি। প্রথম দিনে কোনো ক্রেতাই ছিল না। তবে দ্বিতীয় দিন বুধবার অনেকেই বিভিন্ন পোশাক নিতে মার্কেটে এসেছেন। ব্যবসা ভালো না হলেও মার্কেট খোলার অনুমতি দেওয়ায় অনেকটা স্বস্তি পেয়েছি।

২ জন যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি থাকলেও ৬ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া অটোচালক আব্দুল মতিন জানান, কী করব বলেন? ১৪ দিন ধরে অটো চালাতে পাইনি। সংসারে অভাব লেগেছে অনেক। আর মাত্র ২ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে কয়টা টাকা আয় করব? এতে সংসার চলবে না। 

বাজার করতে আসা শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, দোকানপাট, মার্কেট সব খুলে গেছে। বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। গায়ে গা লাগিয়ে চলাফেরা করছেন। অনেকের মুখেই মাস্ক নাই। ১৪ দিনের বিশেষ লকডাউন শেষে এখন জেলা শহরের অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক।

এদিকে বুধবার (৯ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলা শহরের নিউ মার্কেট, ক্লাব সুপার মার্কেট, ডিসি মার্কেট, রেলস্টশন, শান্তিমোড়, পুরাতন বাজার, নয়াগোলা বাজার, সদর হাসপাতাল, থানা মোড়, বিশ্বরোড, মহানন্দা বাস স্টেশন এলাকায় জনসচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিয়াকত আলী সেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশেষ লকডাউন শেষ হলেও জেলাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জেলা প্রশাসনের জনসচেতনতানূলক কার্যক্রম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৬৫ জনের। জেলায় মোট করোনা শনাক্ত ২৮১৮ জন, চিকিৎসাধীন আছেন ১২৯৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪৬৪ জন। জেলায় মোট মৃত্যু ৬১ জন। 

জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর