এক্সপ্রেস হাইওয়ে হওয়ার পর মহাসড়কের দুই পাশের জমিগুলোর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে পদ্মা নদীর দুই পাড়ের জীবনচিত্র। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়।

এক দশক আগেও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশের আবাদি জমিগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হতো। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে সেই জমির দাম বেড়েছে ৮-১০ গুণ। এখন চওড়া দামেও মিলছে না সেতু প্রকল্প ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েসংলগ্ন এলাকার জমি।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসে গেছে সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর পুরো অংশ (৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার) দৃশ্যমান। 

এদিকে পদ্মা সেতু ঘিরে মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের মতো স্বপ্ন দেখছেন আবাসন ব্যবসায়ীরাও। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ের দুই পাশের জমিতে একের পর এক আবাসন ব্যবসায়ীদের পুঁতে রাখা সাইনবোর্ড সেই বার্তা দিচ্ছে। 

প্রতিদিনই চলছে জমি কেনাবেচা। পছন্দের জমিতে বিনিয়োগ করতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের বড় বড় ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবীরা ছুটে আসছেন এখানে।

সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা থেকে শ্রীনগরের কেসিরোড, দোগাগাছি, লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদিনিমন্ডল টোলপ্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার রাস্তার পাশে আমিন মোহাম্মদ সিটি, পুষ্পধারা, স্বপ্নধারা, ধরিত্রী, দখিনাচল, নতুন ধারা ও মেরিন গ্রুপসহ প্রায় শতাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা যায়। 

এক্সপ্রেস হাইওয়ের দুই পাশের জমিগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। সাধ্যের মধ্যে এসব জমি দেখতে দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। তবে দাম বৃদ্ধি পেলেও খুব সহজে স্থানীয় বাসিন্দারা হাতছাড়া করছেন না নিজস্ব জমি। অবশ্য সোনার মতো দামি হয়ে ওঠা এসব জমি হাতছাড়াই বা করবেন কেন তারা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তাদের দেখাচ্ছে রঙিন স্বপ্ন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলার জমিগুলোর দাম স্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল। তবে পদ্মা সেতুর স্প্যান একের পর বসতে শুরু করলে এবং এক্সপ্রেস হাইওয়ে হওয়ার পর মহাসড়কের দুই পাশের জমিগুলোর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যে জমিগুলো গড়ে ৫০ হাজার টাকা শতাংশ বিক্রি হতো সেই জমিই এখন পাঁচ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। যাদের জমি আছে, আবসন প্রকল্পগুলো জমি কিনতে প্রতিনিয়ত দেন-দরবার করছে। আবাসন প্রকল্পের বাইরেও অনেকেই জমি কিনতে আসছেন।

স্বপ্নধারার হাউজিং প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বিভাগের প্রধান শাহ নেওয়াজ আজাদ বলেন, বছর খানেক আগেও পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। পদ্মা সেতু যত বাস্তবের দিকে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে তত আস্থা বাড়ছে। এতে করে জমি বিক্রি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার আগে মাসে গড়ে ৫০টি প্লট বিক্রি হলেও গত চার মাস ধরে প্রতিমাসে গড়ে ৭০টি প্লট বিক্রি হচ্ছে। জমির দাম দ্রুত বাড়ছে। জমি কেনার পরপরই দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে বিনিয়োগ করা অধিকাংশ মানুষই দক্ষিণাঞ্চলের।

শাহ নেওয়াজ আরও বলেন, আমাদের এখানে প্রতি কাঠা জমি ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি হয়। বছরে কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার টাকা বাড়ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প যত বাস্তবে রূপ নিচ্ছে জমির দাম ততই বাড়ছে।

আমিন মোহাম্মদ সিটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মধুল হাসান বলেন, মুন্সিগঞ্জের আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট হওয়ার কথা ছিল। তখন থেকে এ অঞ্চল ঘিরে আবাসন ব্যবসার দিকে আগ্রহী হয় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। পরে এয়ারপোর্ট না হলেও পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক আবাসন ব্যবসা গড়ে ওঠে। 

তিনি বলেন, প্রথম দিকে এসব প্লট সাধারণ মানুষজন কিনতেন। কিন্তু যখন পদ্মা সেতু দিন দিন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে তখনই শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ এখানে বিনিয়োগ করা শুরু করে। তবে রেল লাইনটা উঁচু হওয়ায় বিনিয়োগ থেকে কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছেন।

এএম