রংপুরে পানিবাহিত রোগ, হেপাটাইটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মশালা

প্রতি বছর বিশ্বে পানিবাহিত রোগে ১৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ৮ লাখ ৪২ হাজার মানুষ অকালে মারা যায়। বিশ্বের প্রতি ৩ জন মানুষের মধ্যে একজন হেপাটাইটিস বি কিংবা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

২০১৫ সালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ লাখ মানুষ মারা গেছেন। জনসচেতনতা তৈরি করা গেলে হেপাটাইটিস, ক্যানসার ও পানিবাহিত রোগের মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে রংপুর সদর হাসপাতালে জেলা সিভিল সার্জনের কনফারেন্স রুমে সচেতনতামূলক এক কর্মশালায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় পানিবাহিত রোগ, হেপাটাইটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে। সভাপতিত্ব করেন রংপুর বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

বক্তব্য রাখেন রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহামুদুর রহমান টিটু, ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ অফিসের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক অরবিন্দু সরকার মোদক ।

হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যানসার হয়ে মৃত্যু হতে পারে বলে কর্মশালায় তুলে ধরা হয়। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করতে রোগটি সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে সচেতনতা, নবজাতককে হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বার্থ ডোজ, একই সিরিঞ্জ বারবার ব্যবহার না করা, বছরে দুইবার রক্তের পরীক্ষা করা, নিরাপদ যৌনচর্চার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া, নিরাপদ খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা গেলে এ রোগ প্রতিরোধ সহজ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বক্তারা বলেন, বিশ্বে ২০০ ধরনের ক্যানসার রয়েছে, যার কারণে প্রতিবছর লাখো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১২ সালে সারা বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ ক্যানসারে মারা গেছে। বাংলাদেশে ১৩-১৫ লক্ষ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে এসব মৃত্যুর ৩০ শতাংশ অতি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, দেশের এক তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মলের জীবাণু রয়েছে এমন উৎসের পানি পান করছে ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ। এক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শহরাঞ্চলের এসব পরিবারে যে পানি খাওয়া হয়, তার এক তৃতীয়াংশেই উচ্চমাত্রার ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের সময় এতে আরও বেশি ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া চলে যায়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর