যাত্রাপালার রূপসজ্জাশিল্পী মুক্তি রানী

এককালে বিনোদনের প্রধান অনুষঙ্গ ছিল যাত্রাপালা। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। বছরের পর বছর বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও কলাকুশলীদের অনেকেই পরিবর্তন করেছেন তাদের পেশা, আর কেউ কেউ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

মুক্তি রানীও এ শিল্পকে ভালোবেসে একসময় পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, এখন তিনি চরম বেকায়দায় পড়েছেন। প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তার দিন। অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে পেশাও বদলাতে পারছেন না তিনি।

ভূমি ও গৃহহীন মুক্তি রানী দাসের ৬৫ বছর ছুঁই-ছুঁই। তার স্বামী রতন চন্দ্র দাস। ২৮ বছর ধরে তিনি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বুলবুল সিনেমা হল এলাকায় বসবাস করেন।

জানা যায়, মুক্তি রানীর জন্ম নাটোর জেলা সদরের লালবাজার এলাকায়। পাকিস্তান আমলে তার বিয়ে হয় একই জেলা সদরের বাসুদেবপুর এলাকার রতন চন্দ্রের সঙ্গে। কয়েক বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এরই মধ্যে ঘর আলোকিত করে আসে নতুন অতিথি। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯৬৯ সালে সাত মাস বয়সের সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন মুক্তি।

দুস্থ পরিবারের হাল ধরতে নাম লেখান যাত্রাদলে। এরই পরিক্রমায় চলে আসেন মহাদেবপুর উপজেলায়। অভিনয় করেন যাত্রাদলে, ছিলেন ভালো রূপসজ্জাশিল্পী। কাজ করেছেন অসংখ্য যাত্রাদলে। বর্তমানে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও শো-রুম পরিষ্কার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে বসবাস করেন নাটোরে। কিন্তু তার মায়ের কোনো খোঁজ নেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বুলবুল সিনেমা হল এলাকার বিশ্বাস স্কয়ার মার্কেটের পেছনের একটি পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা টিনের ঘরে তার বসবাস। বেড়াগুলোতেও অসংখ্য ফোটা। বৃষ্টির পানি পড়ায় স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। রাতে বৃষ্টি হলে নির্ঘুম রাত কাটে।

কথা হয় শিল্পী মুক্তি রানীর সঙ্গে। বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি। অশ্রুসিক্ত চোখে ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাত্রাশিল্পীদের খোঁজ কেউ রাখে না। বয়স বেড়ে যাওয়ায় শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। এসব রোগ নিরাময়ে ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্যও নেই আমার। শরীরে শক্তি না থাকায় কোনো কাজ করতে পারি না।

কাউকে জানিয়েছেন কি না প্রশ্নে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, তবু কোনো ভাতার কার্ড পাইনি। তবে গত বছর উপজেলা থেকে মাত্র ৫০০ টাকা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, মহামারি করোনার, লকডাউনের মধ্যেও খবর রাখেনি কেউ। আর কত গরিব হলে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি সরকারি ঘর ও ভাতার কার্ড পাব?

বুলবুল সিনেমা হল এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তি রানী দাস আমার প্রতিবেশী। তাকে পুনর্বাসন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সরকারি ঘর ও শিল্পীভাতা পেলে তিনি উপকৃত হবেন।

এ বিষয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ধলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। বিষয়টি দুঃখজনক। কী কারণে এত দিনেও ভাতা পাননি, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। পরিষদ থেকে দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শামীনূর রহমান/এনএ