বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধ আবদুস সালাম

দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ৭৫ বছর বয়সী আবদুস সালাম। কিন্তু তার প্রতি খেয়াল নেই ছেলে-মেয়েদের। দুবেলা দুমুঠো খাবারও জোটেনি। কিন্তু ছেলের বউদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ঠিকই জুটেছে। আর এই কষ্ট বুকে চেপে ছয় মাস আগে বাড়ি ছেড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম। তার বাবার নাম আবদুল আসেদ।

এই ছয় মাস রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ভবঘুরে জীবনযাপন করছেন আবদুস সালাম। তীব্র শীতের ভেতর খোলা আকাশের নিচে কাটছে তার রাত। নেই খাবারের ব্যবস্থা। পথচারীদের অনুগ্রহ নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে শুয়ে ছিলেন আবদুস সালাম। ময়লার আবরণ জমেছে গায়ে। ভনভন করছে মাছি। কাশছেন মাঝে মাঝেই। পথচারীদের কারও নজর নেই সেদিকে।

জানতে চাইলে ক্ষীণ কণ্ঠে আবদুস সালাম জানান, দুই দিন ধরে তিনি কারও সাহায্য পাননি। এই দুই দিন তার পেটে খাবারও জোটেনি। শীতের ভেতর খোলা আকাশের নিচে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।

কী খেতে চান- জানতে চাইলে তিনি জানান, কলা-পাউরুটি। ভাত খেতে তার সমস্যা হচ্ছে। 

হাতে রুটি আর কলা পেয়ে শোয়া থেকে উঠে বসেন আবদুস সালাম। হাসিমুখেই গ্রহণ করেন খাবার। এরপর শোনান তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার বিবরণ।

দুই দিন ধরে কারও সাহায্য পাননি আবদুস সালাম

আবদুস সালাম জানান, তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে বিপুল ফুলবাড়ী বাজারে কসমেটিকের দোকান চালান। ছোট ছেলে বিপ্লব একই বাজারে ওষুধের দোকান চালান। কিন্তু আফসোস আজ তার অসুখের সময় ওষুধ নেই। খাবার নেই।

তিনি আরও জানান, দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তারাও স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই আছেন। ছেলেদেরও আলাদা সংসার। তাদের সংসারে কেবল ঠাঁই হয়নি তার। 

আবদুস সালাম জানান, চার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী লাইলা বেগমকে নিয়ে তারও ছিল সুখের সংসার। এলাকায় তার মুদির দোকান ছিল। বিভিন্ন কৃষিপণ্য কেনাবেচাও করতেন। রাজশাহীতেও ব্যবসা করেছেন। যাতায়াত ছিল নিয়মিতই। পৈত্রিক সূত্রে কেবল পেয়েছিলেন বসতভিটাটুকু। ব্যবসার আয় থেকে পরে চার বিঘা ধানি জমিও কেনেন। এই জমি এখনও তার নামেই। কিন্তু তিনি ফসল ভোগ করতে পারেন না।

বছর দশেক আগেই স্ত্রী লাইলা বেগম মারা গেছেন। এরপর থেকেই তার ওপর বাড়তে থাকে সন্তানদের অবহেলা। একপর্যায়ে তা চরমে পৌঁছায়। দিনে এক বেলাও খাবার জুটতো না তার। কথায় কথায় খোঁটা দিতেন ছেলের বউরা। পরে কষ্ট-অভিমান বুকে চেপে সবার অজান্তে ছয় মাস আগে বাড়ি ছাড়েন। ওঠেন রাজশাহীগামী ট্রেনে। সেই থেকেই তিনি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়।

ছেলেদের সংসারে আর ফিরতে চান না জানিয়ে আবদুস সালাম বলেন, তারা মানুষ না, তাদের কাছে গিয়ে কী লাভ? আর কদিন রাজশাহীতে থাকবো। তারপর হয়তো অন্য কোথাও যাবো। আল্লাহ দিন পার করবেন। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই।

আরএআর