অভিযুক্ত সৌমেন রায়

বহুল আলোচিত কুষ্টিয়ার ট্রিপল মার্ডার মামলার একমাত্র আসামি সাময়িক বরখাস্ত এএসআই সৌমেন রায় কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে রয়েছেন। গত সোমবার (১৪ জুন) আদালতে স্ত্রী, সৎ ছেলে ও এক যুবককে গুলি করে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন সৌমেন। 

সৌমেন কারাগারে চুপচাপ রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তিনবেলা খাবার খাচ্ছেন। তিনি করোনা ওয়ার্ডে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের সুপার মো. তায়েদ উদ্দিন মিয়া ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, সৌমেন ভালো আছেন। দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার খেয়েছেন। তিনি মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছেন। অন্যান্য সাধারণ বন্দীদের মতো তিনি স্বাভাবিকভাবে সময় পার করছেন। শারীরিক বা মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েননি। খুব স্বাভাবিক এবং শান্তশিষ্ট আছেন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তবে কারাগারে আসার পরের দিন তার হালকা রক্তচাপ বেড়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। 

কারাগার সূত্রে জানা যায়, এএসআই সৌমেনকে জনতার সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিজের সার্ভিস রিভলভার, ম্যাগাজিন ও গুলিসহ আটক করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর সোমবার (১৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত থেকে তাকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে আসার পর থেকেই সৌমেন একেবারেই চুপচাপ রয়েছেন। তিনি তিনবেলা নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন।

জেলায় করোনা শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই কারাগারে ভিআইপি বন্দিদের জন্য রাখা কক্ষগুলো নতুন আসামিদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সৌমেনকেও সেখানে রাখা হয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে আরও কয়েকজন আসামি রয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন রাখার পর অন্য একটি ওয়ার্ডে রাখা হবে। তবে তিনি কারাগারের মধ্যে যাতে কোনো অঘটন না ঘটাতে পারেন সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে বলে জানা গেছে।

জেল সুপার মো. তায়েদ উদ্দিন মিয়া বলেন, করোনার কারণে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কারাগারে। সপ্তাহে একদিন পরিবার বা স্বজনদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ আছে। কিন্তু সৌমেন এখনো কারও সঙ্গে কথা বলেননি। কারাগারে নতুন যেসব আসামি আসছে তাদেরকে আমরা প্রথমে কোয়ারেন্টাইনে রাখছি। তারপর সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে দিচ্ছি। সৌমেন এখন করোনা ওয়ার্ডে কোয়ারেন্টাইন আছেন। ১৪ দিন পর তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, বন্দীদের থাকা-খাওয়া, দেখা-সাক্ষাত এবং চিকিৎসা এই মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার। জেলখানায় বন্দীদের ব্যাপারে আমরা কখনো গাফিলতি করি না। অন্যান্য সাধারণ বন্দীর মতো সৌমেনও একজন বন্দী। তার দিকে আমাদের নজর আছে। সে স্বাভাবিকভাবেই কারাগারে আছে। তার আইনজীবী এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি। 

এদিকে ট্রিপল মার্ডার মামলায় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত এএসআই সৌমেন কুমার রায়। সোমবার (১৪ জুন) বিকেলে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন। দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। 

দুপুর ১টা ৫ মিনিটের দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাকে আদালতে হাজির করে। পরে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে ৪টা ৩০মিনিটে তাকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার বলেন, নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে রোববার (১৩ জুন) হত্যা মামলা করেছেন। আসামি সৌমেনকে দুপুরে আদালতে নেওয়া হয়। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি কারাগারে রয়েছেন। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। 

অপরদিকে এএসআই সৌমেন রায়কে গত রোববার (১৩ জুন) বিকেলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, ঘটনা জানার পর সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পান। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন সৌমেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনার ফুলতলা থানায় যোগ দেন।

রাজু আহমেদ/আরএআর