সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবার চুয়াডাঙ্গার সদর পৌরসভা ও পার্শ্ববর্তী আলুকদিয়া ইউনিয়ন এলাকায় লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। রোববার (২০ জুন) সকাল ৬টা থেকে এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত এ লকডাউন বলবৎ থাকবে।

শনিবার (১৯ জুন) বিকেল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে লকডাউন বিষয়ে একটি ঘোষণা আসে।

পরে রাতে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

শনিবার (১৯ জুন) দুপুরে চার ঘণ্টার ব্যবধানে করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৮০-তে দাঁড়াল।

শুক্রবার (১৮ জুন) জেলায় নতুন করে আরও রেকর্ডসংখ্যক ৭৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণের রেকর্ড এটি। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫২৩-এ দাঁড়াল।

সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে নিতে ২০ জুন (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ২৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর পৌর এলাকা এবং আলুকদিয়া ইউনিয়ন এলাকায় এ লকডাউনের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

তবে জরুরি পরিষেবার আওতাধীন পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। একই সঙ্গে ওই এলাকায় সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে চালু থাকবে। আর ওষুধের দোকান খোলা থাকবে সব সময়।

লকডাউন চলাকালে শহরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজি, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। লোকাল বাস শহরে চলবে না। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো চললেও তা শহরের মধ্যে থেমে যাত্রী ওঠানো নামানো করবে না। জেলার সব পশুর হাট ও পানের হাট বন্ধ থাকবে।

শুধু পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়বে। ওখান থেকেই যাত্রী ওঠানামা করবে। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রি/সরবরাহ (Takeway online) করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দোকান সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কাঁচাবাজারের কথা বলে কেউ ব্যাগ ছাড়া ঘুরলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদকর্মীরা মোটরসাইকেলে একজনের বেশি চলাচল করা যাবে না। পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে।

চা-দোকানিদের প্রয়োজনে নির্ধারিত পরিমাণের চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। তবে জরুরি পরিষেবা, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা, কৃষিপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরঞ্জাম সংগ্রহ ও পরিবহন এবং সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে পাওয়া গেলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।

লকডাউন মানাতে এলাকাগুলো তদারক করবে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় লকডাউনের প্রভাবে কর্মহীনদের মধ্যে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিকায়ক লে.কর্নেল খালেকুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতিসহ কমিটির সদস্যরা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।

আফজালুল হক/এনএ