শখের খাঁচা থেকে স্বপ্নের খামার, পাখি পালনে সাবলম্বী দম্পতি
ঘরের এক কোণে ছোট্ট কয়েকটি খাঁচা। আর তাতে শখ করে পাঁচ জোড়া বার্জিগার পাখি পালন। এভাবেই যাত্রা শুরু করেছিলেন পিরোজপুর শহরের পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাগর হাওলাদার ও তার স্ত্রী মুমু। সময়ের সঙ্গে সেই শখ রূপ নেয় স্বপ্নে, আর স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় এক সফল বাণিজ্যিক উদ্যোগ।
শুরুর দিকে নিছক ভালো লাগা থেকে পাখি পালন করলেও ধীরে ধীরে তাদের আগ্রহ, যত্ন আর পরিশ্রমে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। এক সময় সিদ্ধান্ত নেন শখের গণ্ডি পেরিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন করবেন। সেই সিদ্ধান্তই আজ বদলে দিয়েছে তাদের জীবনের গল্প।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে এই দম্পতির খামারে রয়েছে বার্জিগার, টিয়া, ককাটেল, কোয়েল, লাহুরি সিরাজি কবুতরসহ নানা জাতের পাখি এবং কালার বার্ড জাতের বিদেশি মুরগি। সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জোড়ারও বেশি পাখি এখন তাদের খামারে।
বিজ্ঞাপন
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী। তবুও প্রতিদিন সময় বের করে তারা পাখিগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। নিয়মিত খাবার দেওয়া, পরিচ্ছন্নতা, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর যত্ন সবকিছুই চলে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে। শুধু তাই নয়, পাখির স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের সিডের পাশাপাশি নিজেরাই ছাদে ঘাস উৎপাদন করছেন খাবারের জন্য। এই পরিশ্রমই এনে দিয়েছে সাফল্য। পাখি বিক্রি করে এখন তারা প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
সাগর হাওলাদার জানান, বর্তমানে প্রতি জোড়া বার্জিগার ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, ককাটেল ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, লাহুরি সিরাজি কবুতর ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, কোয়েল পাখি ১০০ থেকে ২০০ টাকা জোড়া দরে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া কালার বার্ড জাতের বিদেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এতে খরচের পরে তার ভালোই লাভ থাকছে।
শখের এই উদ্যোগে সফলতার স্বীকৃতিও মিলেছে তাদের। নবীন উদ্যোক্তা হিসেবে তারা ইতোমধ্যে পুরস্কারও পেয়েছেন। তবে এখানেই থামতে চান না সাগর-মুমু দম্পতি। তাদের স্বপ্ন এই খামারকে আরও বড় পরিসরে গড়ে তোলা।
সাগরের স্ত্রী মুমু বলেন, শুরুটা খুব ছোট ছিল। কিন্তু নিয়ম মেনে যত্ন নিলে যে পাখি পালন থেকেও বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া যায়, সেটা এখন আমরা নিজেরাই প্রমাণ পাচ্ছি। সরকারি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা পেলে খামারটা আরও বড় করতে পারতাম।
এই দম্পতির সাফল্য আশপাশের মানুষকেও অনুপ্রাণিত করছে। অনেকেই তাদের খামার দেখতে আসছেন, কেউ কেউ আবার নিজেরাও পাখি পালন শুরু করেছেন।
প্রতিবেশী রাশেদ ইসলাম বলেন, ওদের পরিশ্রম চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। সঠিক পরিচর্যা করলে পাখি পালন যে লাভজনক হতে পারে, ওরা তার উদাহরণ। সরকার যদি ওদের একটু সহযোগিতা করে, তাহলে এই খামার আরও বড় হবে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. দেবাশীষ চন্দ্র পাল বলেন, আমি অবগত আছি সাগর হাওলাদার শখ থেকে শুরু করে এখন বাণিজ্যিকভাবে সৌখিন পাখি পালন করছেন। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা ও রোগব্যাধি সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছি। ভবিষ্যতেও সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শাফিউল মিল্লাত/এএমকে